LinkedIn

Monday, 3 March 2025

My Blog Post ll Looking Behind ll Rabi Roy

বছর কুড়ি আগেও পাড়াগুলোতে পাড়া কালচার ছিল। আর ছিল রোয়াক। পাড়ার উঠতি থেকে পড়ন্ত যুবকরা সেখানে আড্ডা মারত। সাথী ছিল চা, কাউন্টার করে খাওয়া সিগারেট আর মাঝে মধ্যে টুকটাক তেলেভাজা কি ঝালমুড়ি। ওয়াও, মোমো বা মনজিনিস তখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। রেস্তোরাঁ কালচার তখনও বাঙালীর জীবনযাত্রায় প্রবেশ করেনি। 

পাড়ার যুবকদের একটা করে ভালো নাম ছিল ঠিকই, কিন্তু সেগুলো কেবল স্কুল-কলেজে ব্যবহার হওয়ার জন্য। পাড়ার মধ্যে তারা হাবুল, পটলা, বাপি নামেই পরিচিত ছিল। কখনও কখনও চেহারার বৈশিষ্ট্য অনুসারের নাম দেওয়া হত। ঢ্যাঙা, ন্যাড়া, কালু ইত্যাদি নামগুলি ছিল তারই প্রতিফলন। বডি শেমিং নিয়ে আমজনতা তখনও সচেতন হয় নি৷ তাই এমন সব নাম নিয়ে আপত্তির কিছু ছিল না কারো কাছে। ঢ্যাঙা বা কালুরাও তাদের নাম শুনে স্বাভাবিক ভাবেই সাড়া দিত।
পাড়ায় বিয়ে বাড়ি হোক বা শ্রাদ্ধ বাড়ি, আগুন লাগা হোক বা মাঝ রাতে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, সব ব্যাপারে রোয়াকের যুবকরাই ছিলেন অগ্রণী। পাড়ায় কারো বিয়ে লাগলে যেমন কোমরে গামছা বেঁধে পরিবেশন করতে লাগত আবার তেমনই কেউ মারা গেলে শবদেহে কাঁধ দেবার লোকেরও অভাব হত না। মাঝরাতে কেউ গুরুতর অসুস্থ হলেও কোনো সমস্যা ছিল না৷ রোগীর বাড়ির লোকের এক ডাকেই পটলা-হাবুলরা সাইকেল ভ্যানে রোগীকে চাপিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যেত। সারারাত জেগেও থাকত হাসপাতালে। দরকারে নিজেদের মধ্যে টাকা তুলে ওষুধও কিনতো রোগীর।

উপদ্রবও যে একেবারে ছিল না তা নয়। পুজোয় চাঁদার জন্য হুজ্জোতি করা, সরস্বতী পুজোর আগের দিন এর ওর বাড়ির পাঁচিল ডিঙিয়ে বাগান থেকে ফল ফুল পেড়ে আনা, কারো পোষা মুরগী চুরি করে পয়লা জানুয়ারী বা মহালয়ার রাতে 'ফিস্টি' এসব লেগেই থাকত৷ পাড়ার খিটকেলে বুড়ো-বুড়িদের নানা আপত্তিকর সৃজনশীল নামে ডেকে তাদের রাগিয়ে দিয়ে গালাগাল খেয়ে মজা পাবার বদভ্যাসও অনেকেরই ছিল। কিন্তু সব মিলিয়ে পটলা-হাবুল-বাপিরা ছিল পাড়ার এক একটা স্তম্ভ। পাড়াগুলো তাদের ছাড়া অচল ছিল। 

তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। অনেক বদল ঘটেছে মফঃস্বল থেকে বড় শহর সর্বত্র। পাড়া কালচার আজ বিলুপ্তপ্রায়। পাড়ায় রোয়াকের দেখা পাওয়া এখন ডোডো পাখির দেখা পাওয়ার চেয়েও বেশী কঠিন৷ আর হাবুল-পটলা-বাপিরা? তারাও হারিয়ে গেছে কালের স্রোতে। সর্বনাশা কেরিয়ারের ইঁদুর দৌড়ের যুগে এ যুগের হাবুল-পটলারা কেউ এখন মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির সুট বুট পরা চাকুরে, কেউ সরকারী কেরানি, কেউ বা আবার জোম্যাটো বা সুইগির ডেলিভারি বয়। কাজের চাপে আড্ডা তো পরের কথা, মুখ দেখাদেখিই হয় না মাসের পর মাস। কেউ কেউ আবার কাজের সন্ধানে চলে গেছে দূর দেশে। ন'মাসে ছ'মাসে দেশে ফেরে। আড্ডা মারা দূরে থাক, পাড়ার সবার নামই জানে না ভালো করে কেউ। বাড়িই বা আর কোথায় পাড়ায়৷ সব ভেঙে গড়ে উঠছে একের পর এক ফ্ল্যাট। সুসজ্জিত সেসব ফ্ল্যাটে আস্তানা গাড়ছে বহিরাগত বিভিন্ন মানুষরা। তাদের টান নেই পাড়ার প্রতি। অনেকের ভাষা সংস্কৃতিও ভিন্ন। 
পটলা-হাবুল-বাপিরা আর ফিরবে না কোনোদিন। রাতের আকাশের তারার মতই তারা মিলিয়ে গেছে কালের গহীন গর্ভে।
*সংগৃহীত। আমার নিজের অভিজ্ঞতা পরে বলবো 

No comments:

Post a Comment