LinkedIn

Wednesday, 26 February 2025

উজান বেয়ে আশি ll Memories ll II রবি রায়

আমার জীবনের আনন্দ-বেদনা, 
আশা-নিরাশা, সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরা এই লেখার উদ্দেশ্য যা থেকে আগামী প্রজন্মের একটা গঠনমূলক মনোভাব তৈরি হতে পারে।
The purpose of this writing is to present a record of the joys and sorrows, hopes and disappointments, successes and failures of my life, so that a constructive attitude can be formed in the coming generation.

উত্তর কলকাতার কৈলাস বোস স্ট্রিটে দাদুর বাড়িতে আমার এই পৃথিবীকে প্রথম দেখা, আমার প্রথম চোখ খোলা। 

Sunday, 23 February 2025

Bangla Typing Speed ❤️ Bangla Typing Tutor ❤️ Online Bangla Typing Test

Bangla Typing Speed ❤️ Bangla Typing Tutor ❤️ Online Bangla Typing Test: ✅BANGLA typing speed test is a free typing tutor for beginner and advanced to practice typing. BANGLA typing speed tester to check your typing speed and accuracy, its fully free. use & enjoy ...!

Saturday, 22 February 2025

Rabi Roy II Illustrated Poems

 















দেবদাসী: ধর্মের মোড়কে গণিকাবৃত্তি II wwwww II রচনা: রবি রায় II পৃষ্ঠা: ২

22222

দেবদাসী: ধর্মের মোড়কে গণিকাবৃত্তি II শুরুর কথা II রচনা: রবি রায় II পৃষ্ঠা: ১

বিষয়: দেবদাসী


উৎসর্গ


সেইসব শিশুকন্যাকে

যারা যুগ যুগ ধরে 

ধর্ম আর ঐতিহ্যের নামে 

লোভাতুর পুরুষের লালসার বলি হয়ে আসছে।

   লেখক: রবি রায় 


শুরুর কথা

“If one copies from one source, it is plagiarism; if one copies from many sources, it is research.” – এরূপ বিচারে আমার এই ক্ষুদ্র রচনাটিকে একটি গবেষণাধর্মী রচনা বলা যেতে পারে। তার সাথে এই কথাও বলা যায়, এই কাজে বর্তমান নিবন্ধকের কৃতিত্ব কেবলমাত্র যথাযথ তথ্য সংগ্রহকারীর, যাঁদের রচনা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, মূল কৃতিত্ব প্রাপ্য তাঁদেরই।তবে নিজের সপক্ষে এটুকু বলা অত্যুক্তি হবেনা যে নকলনবিশীর সময় নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তথ্য বাছাই-এ সম্ভবত ভুল হয়নি। আর বহু প্রাচীন দেবদাসীপ্রথা যে আসলে ধর্মের মোড়কে গণিকাবৃত্তি, সাধারণ পাঠকের সামনে এই সত্য উন্মোচনই ছিল সেই নির্দিষ্ট লক্ষ্য। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে ধর্ম-সভ্যতা নির্বিশেষে আজও যারা দেবদাসী নামে পরিচিত, তাদের সাথে মন্দিরের সম্পর্ক কতটা, ঐশ্বরিক ঐশ্বর্যেই বা কতটুকু সমৃদ্ধ তাদের জীবন- এই ছিল আমার অন্বেষণ। আর এই অন্বেষণ করতে গিয়ে যে সত্য প্রত্যক্ষ করেছি তা বড়ই করুণ, বড়ই নির্মম। 

দেবতার দাসী, তাই দেবদাসী।মন্দিরের দেবতার সেবায় তাদের নিযুক্তি।দেবতা তো এক প্রস্তর বা কাষ্ঠখন্ড যার সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্বাস, আর বিশ্বাস মানেই তো যুক্তিহীন।আদতে রাজা, ভূস্বামী প্রভৃতি মানবদেহরূপী দেবতাদের মনোরঞ্জন তথা শরীরি ক্ষুধা নিবৃত্তির তাগিদেই যুগ যুগ ধরে সুকৌশলে টিকিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে এই প্রথাকে। দেবদাসীপ্রথার উদ্ভব কখন, কেন, কিভাবে- এ নিয়ে গবেষণা এখনও শেষ হয়ে যায়নি, তবে নির্দ্বিধায় একথা বলা যায়, ধর্ম নির্বিশেষে নানা দেশে মন্দিরে মন্দিরে নানা নামে নানা আচ্ছাদনে যেখানে দেবদাসী নিয়োগ হত সেগুলিই পৃথিবীর প্রথম গণিকালয় (Brothel)।

দেবদাসীপ্রথা আজ অবলুপ্তপ্রায়। যেকটি স্থানে এই অমানবিক প্রথাটি আজও বিদ্যমান তার মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ ভারতের দু’টি রাজ্য। কন্যাশিশুদের দেবদাসী বানিয়ে এই রাজ্যগুলির নানা অঞ্চলে আজও অবাধে চলছে ধর্মের মোড়কে গণিকাবৃত্তি। ঐসব এলাকার বহু গ্রাম আজ মুম্বাইয়ের কুখ্যাত রেডলাইট এলাকা কামাথিপুরা-র মেয়েবাজারে পণ্যের যোগানদার হিসেবে পরিচিত। এই পণ্য মন্দিরে উৎসর্গিত নিষ্পাপ কন্যাশিশু তথা দেবদাসী।

১৯৯৮ সালে, নারী ও শিশুপাচার নিয়ে কর্মরত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মুখপত্রে আমার এই লেখাটি প্রচ্ছদ নিবন্ধ হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে এটির ইংরেজী ভাষান্তরও প্রকাশিত হয় যা ছিল আরও তথ্যবহুল। 

এই লেখাটি যখন প্রথম লিখেছিলাম তখনও বিষয়টির গভীরতা সম্পর্কে আমার সম্যক ধারণা ছিলনা। পরবর্তীকালে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেছি আমাদের দেশে এমন অনেক সম্প্রদায় আছে যাদের মধ্যে ঐতিহ্যগত ভাবেই পরিবারের প্রথম কন্যাসন্তানটিকে গণিকাবৃত্তিতে নিযুক্তি একটি সামাজিক প্রথা হিসেবে স্বীকৃত। দেবদাসীপ্রথাকেও এই গোত্রেরই অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, অতিরিক্ত যেটুকু তা হল এক্ষেত্রে ধর্মের stamp সেঁটে দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৯ সালে একটি তথ্যানুসন্ধান দলের সদস্য হিসেবে আগ্রায় থাকাকালীন এমনই একটি সম্প্রদায়ের দেখা পাই যাদের একদা শিল্পি হিসেবে খ্যাতি ছিল। বেড়িয়া (?) নামের তাজমহল-এর নিকটবর্তী বাস এই সম্প্রদায়টির পরিচিতি শহরের গণিকালয় গুলিতে নিজ পরিবারের সুন্দরী কন্যাদের যোগানদার হিসেবে। কলকাতার সোনাগাছি-তে এরাই আগ্রাওয়ালী নামে সুপরিচিত। 

আগ্রায় থাকাকালীন আমরা একটি পরিবারে গিয়েছিলাম যে পরিবারের মেয়েরা প্রথা মেনে নিজেদের বাড়িতেই গণিকাবৃত্তি করে। বাড়ির পুরুষ সদস্যরা তাদের জন্য খদ্দের জোগাড় করে আনে। পরিবারটির সাথে কথা বলে সামান্য অস্বাভাবিকতাও অনূভব করিনি। আমাদের ভাড়া করা গাড়ির বয়স্ক চালক জানিয়েছিলেন এমন পরিবারের অভাব এখানে নেই। এই সম্প্রদায়টির নাম আজ আর মনে করতে পারিনা।


আমাদের ‘মহান’ দেশ ভারত ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দেবদাসীপ্রথার উল্লেখ আছে আমার বর্তমান নিবন্ধটিতে। তবে যে সময় এটি লেখা হয়েছিল সেসময় যথেষ্ট তথ্য হাতে না থাকায় প্রতিবেশী দেশ নেপাল-এর কথা বাদ পড়েছিল।এই ঘাটতি কিছুটা ভূমিকাতেই পুরণের চেষ্টা করছি।

নেপালে প্রচলিত দেবকী প্রথা ভারতের দেবদাসী প্রথারই নামান্তর। নেপালের প্রত্যন্ত এলাকায় এই প্রথার অস্তিত্ব বর্তমান বলে জানা গিয়েছে মিনা পাওয়েল-এর একটি লেখা থেকে। 

কিভাবে ও কবে থেকে এই প্রথার শুরু তার অবশ্য প্রামাণ্য কোন দলিল নেই।তবে চলে আসছে একটি কাহিনী। একদা পশ্চিম নেপাল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাসকদের শাসনাধীন ছিল।এরা আবার ‘বাইশি’ ও ‘চৌবিশি’ অর্থাৎ (বাইশটি ও চব্বিশটি) নামে দু’টি জোটে বিভক্ত ছিল। ১৭৭০ সালে সম্মিলিত নেপাল রাষ্ট্র গঠনের আগে পর্যন্ত এরকম শাসনব্যস্থাই কায়েম ছিল নেপালে। কথিত আছে একদা কোন একজন শাসকের প্রতি দেবতা (কোন দেবতা উল্লেখ নেই) রুষ্ট হন, ফলে তাঁর শাসনাধীন এলাকায় দুর্ভিক্ষ ও নানা রোগের প্রকোপ দখা দেয়। দবতার রোষ থেকে প্রজাদের রক্ষা করতে সেই শাসক নিজের মেয়েকে দেবতার মন্দিরে উৎসর্গ করেন। এরপর থেকে কেউ কোন বিপদে পড়লেই নিজের মেয়েকে মন্দিরে উৎসর্গ করার প্রথা চালু হয়ে যায়। 


প্রচলিত বিশ্বাস হল- কোন মেয়ে ঋতুমতী হবার আগেই দেবতার সেবায় তাকে দান করলে দেবতা খুশী হয়। তাই দেখা যায় ৭-১০ বছরের মেয়েদেরই দেবকী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। যেহেতু দেবতার রোষ থেকে মুক্তির দাত্রী হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হয়, তাই তাকে দেবী বলা হত। এই ‘দেবী’ শব্দটিই রূপান্তরিত হয়ে ‘দেবকী’ হয়।


দেবকীপ্রথা টিকে থাকার পিছনে রয়েছে মানুষের ভ্রান্তবিশ্বাস। অনেকে রোগভোগ বা সন্তানহীনতা থেকে বাঁচতে দেবকী করে।


সাধারণতঃ নিজের মেয়েকেই দেবকী করা হয়। কিন্তু যাদের মেয়ে নেই তারা অন্যের মেয়ে দত্তক নেয়।এজন্য মেয়ের পরিবারকেও অর্থ প্রদান করা হয়। ধনীরা গরিব পরিবারের মেয়ে কিনে নিয়ে প্রথম নিজের ময়ে হিসেবে লালনপালন করে, তারপর দবতাকে উৎসর্গ করে। বাস্তবে সম্পত্তিবানরা গরিবদের মেয়ে কিনে নিয়ে তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করে। দারিদ্র্যের কারণে শিশুকন্যারা বিক্রি হতে বাধ্য হয়। যদি কখনও কোন গরিব পিতা তার মেয়েকে প্রভাবশালী ভূস্বামীদের কাছে বেচতে রাজী না হয়, তাহলে তাকে খুবই বিপদে পড়তে হয়। জমিতে কাজ করতে দেওয়া হয়না, এমনকী পুলিশের সাথে যোগসাজসে কোন-না-কোন অজুহাতে তাকে জেলেও ভরে দেওয়া হয়। এমনভাবে কেনাবেচা হয় যে মেয়েটি জানতেও পারেনা সে বিক্রি হয়েছে।কেউই এইসব মেয়েদেরকে বলেনা তাদের পরিণতির কথা। 


সাধারণতঃ উৎসর্গের পরেও তাদের পরিবারের সাথে তারা থাকতে পারে।একটু বড় হলে তারা বুঝতে শেখে তাদের পরিণতির কথা, বোঝে তারা বিক্রি হয়ে গেছে, দেবতার কাছে তাদের উৎসর্গ করা হয়েছে। 


একবার উৎসর্গ হয়ে গেলে এই মেয়েরা আর বিয়ে করতে পারেনা। লোকে মনে করে যদি কেউ কোন দেবকীকে বিয়ে করে তবে তার ভয়াবহ মৃত্যু হবে। শুধু তাই নয়, তাকে একঘরেও করে রাখা হয় নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যেই।

এভাবেই সামাজিক বিধিনিষেধ প্রয়োগ করে তাকে বিবাহিত জীবনযাপন থেকে বিরত রাখা হয়। কিন্তু যদি কোন দেবকী কারুর সাথে যৌন জীবনযাপন করে বা কারুর রক্ষিতা হিসেবে থাকে, তাতে অবশ্য কোন বাধা নেই, বাধা নেই এমনকী গণিকাবৃত্তিতেও। অনেক সরকারি কর্মচারী যারা বদলী হয়ে এসব জায়গায় কাজে আসে, তারা দেবকীদের রক্ষিতা হিসেবে রেখে তাদের যৌন ক্ষুধা মেটায়, বদলি হয়ে চলে যাবার সময় তাদের ফেলে রেখে যায়।


এই দেবকীদের কোন সন্তান জন্মালে তারা মন্দিরের সম্পত্তি হয়ে যায়- ছেলেরা হয় দাস আর মেয়েরা হয় দেবকী।


এই তথ্য প্রায় দু’দশক আগের। নেপাল এই সময়ের মধ্যে অনেক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে রাজতন্ত্রের অবসান হয়েছে, কিন্তু দেবকীপ্রথার অবসান ঘটেছে এমন তথ্য বর্তমান লেখকের জানা নেই। লেখক অবশ্যই জানার চেষ্টা করবেন এবং ভবিষ্যতে তা প্রকাশও করবেন।


পশ্চিম আফ্রিকার ‘কোশিও’দের অতীতের কথা আমার নিবন্ধে উল্লেখ আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়কার তথ্য আমার নজরে আসে লন্ডন খেকে প্রকাশিত ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকার (সম্ভবত ১৯৯৮ সালের শেষ দিকে) একটি সংবাদ থেকে। একটি রিপোর্ট উল্লেখ করে পত্রিকাটি জানিয়েছে- ঘানা, বেনিন, টোগো ও নাইজেরিয়া’য় বছর আটেকের ৩৫ হাজার মেয়েকে ডাকিনীবিদ্যায় পারদর্শী পুরোহিতদের হাতে সঁপে দেওয়া হয়েছে, যারা তাদের সাথে ক্রীতদাসীর মত ব্যবহার করে ও প্রায়শই ধর্ষণ করে। মূলত যুদ্ধে সাফল্য পাওয়ার জন্য এইসব মেয়েদের উৎসর্গ করা হয় বলে জানিয়েছে "The Forgtten Girl-Slaves of West Africa' শিরোনামের এই রিপোর্টটি।  

এছাড়া রোগমুক্তির জন্য বা যদি পরিবারের কেউ কোন অনৈতিক কাজ করে ফেলে, প্রধানত পুরুষেরা, তাহলে দেবতাকে খুশী করতে পরিবারের কোন নাবালিকাকে মন্দিরে ভেট দেওয়া হয়। এ যেন অনেকটা আমাদের দেশের মানুষদের কালি বা শীতলা মন্দিরে পশুবলি চড়ানোর মত। ঘানার পশ্চিমাঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা সবথেকে বেশী ঘটে থাকে। হতভাগ্য ঐসব মেয়েরা ওখানে ‘ট্রোকোশি’ নামে পরিচিত।

---

Fetish Slaves: A report from West Africa

---

Trokosi: The practice of Devadasi in our country is similar to that of a few countries in West Africa.

---

Tens of thousands of pre-teen girls are being kept as unpaid servants and sex slaves by West African voodoo priests to pay for the sins of their families against traditional gods and spirits. 

According to a report prepared by Paul Bravender Coyle and published a few years back by Australia’s Anti-slavery Society, up to 35,000 virgin girls as young as eight in Ghana, Benin, Togo and Nigeria have been given to fetish priests who treat them like serfs and often rape them.

“Originally offered as a human sacrifice to ensure success in war, these girls are the helpless victims of slavery in which they are known locally as fetish slaves”, said the report titled The Forgotten Girl-Slaves of West Africa. “The girls are offered as slaves in order to appease the gods and to atone for wrongs committed by their relatives, usually male relations.” 

In Ghana, the children, invariably virgins are offered at a shrine after a run of bad luck, or a series of deaths in a clan. They are expected to stay with priests from the age of about eight up to fifteen and sometimes much longer. 

Most of the girl slaves have been in Ghana’s south-western regions where the voodoo practices originating in Benin take place alongside Christianity and Islam. Many of these slaves, who are known as trokosi, have two or three children by their priest-masters. These children are denied access to education, so they are unable to fend for themselves when released from their “indenture” after between three and five years. 

Many former slaves have to remain with the priests after serving the time agreed by their families because they are cut off from any other means of survival, One 86 years old woman quoted in the report said she had been a slave her entire life. 

According to a govt. an official of Ghana, the practice violates the constitutional rights of children. “But it is very difficult to stop. When people believe that they have offended their gods or their ancestor spirit, they will often turn to trokosi as a solution.” 


Source: Child Slaves, ‘appeased spirits’, 

By Sam Kiley 

The Times, London, 

Estimated publication date to the late nineties.

---



পাঠক লক্ষ্য করেবেন যে, আমার রচনাটিতে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ কিম্বা অখন্ড বঙ্গ সম্পর্কে উল্লেখ নেই।  কারণ প্রামাণ্য তেমন কোন তথ্য সেসময় আমার সংগ্রহে ছিলনা। রচনাটি প্রকাশের পরবর্তীকালে যেটুকু তথ্য পেয়েছি তা থেকে অমুমান দশম-একাদশ শতকে বঙ্গদেশে দেবদাসীপ্রথার অস্তিত্ব ছিল। এসময় রচিত সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিতম’-এ মন্দিরে গণিকাদের সম্পর্কের উল্লেখ আছে শুনেছি, তবে আমার নিজের দেখা হয়নি। এছাড়া আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। বিশেষত স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির মত দুই বাংলার কোথাও-ই দেবদাসীপ্রথার অস্তিত্বের তথ্য পাইনি (অনুসন্ধান এখনও জারি আছে)।


তবে আমার জানা একটি ঘটনার উল্লেখ করা এক্ষেত্রে প্রয়োজন মনে করছি। এটিকে অবশ্য একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখতে হবে।

*

কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইংরেজী দৈনিক The Telegraph-এ প্রকাশিত (২১.০৮.১৯৯৫) একটি খবরের (35-year-old woman ‘weded’ to Krishna idol) সূত্র ধরে ১৯৯৮ সালের ১০ নভেম্বর আমি কৃষ্ণনগরে যাই। পত্রিকাটি এখানকার এক গ্রামে দেবদাসী হওয়ার একটি ঘটনার উল্লেখ করেছিল।বিষয়টি বিশদে জানতেই আমার সেখানে যাওয়া। ফিরে এসে ‘The Bride of Krishna Idol at Krishnagar’ শিরোনামে যে নিবন্ধটি প্রকাশ করি সেটির বাংলা অনুবাদ নিম্নরূপ:

এটা ছিল ১৯৯৮ সাল, গত শতাব্দী। ২১শে আগস্ট, ১৯৯৫-এ ইংরেজী দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ (The Telegraph) -এ প্রকাশিত ‘‘35-year-old woman ‘wedded’ to Krishna idol’’ (‘‘৩৫-বছর বয়সী মহিলার কৃষ্ণমূর্তির সাথে ‘বিবাহ’’) শিরোনামের একটি পুরানো প্রতিবেদন হঠাৎ আমার নজরে আসে, যখন আমি বিশ্বব্যাপী ‘ঐশ্বরিক পতিতাবৃত্তি’ নিয়ে একটি নিবন্ধ তৈরি করতে ব্যস্ত ছিলাম। কলকাতা-ভিত্তিক জনপ্রিয় ইংরেজী দৈনিকটি জানিয়েছিল যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ভাতজংলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন আদমশুমারী কর্মী নলিনীকান্ত দত্তের মধ্যবয়সী অবিবাহিত কন্যা জ্যোৎস্না দত্ত ভগবান কৃষ্ণের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। মে ‘৯৫-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে কৃষ্ণমূর্তির সাথে এই বিবাহবন্ধন স্থানীয় মন্দিরের ৭৫ বছর বয়সী ওড়িশা বংশোদ্ভূত পুরোহিত বামদেব মিশ্র দ্বারা প্ররোচিত হয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সংবাদ আমাকে প্রকৃত ঘটনা জানার আগ্রহে অবিলম্বে ওই গ্রামে ছুটে যেতে উৎসাহিত করে। 

আমার জ্ঞানানুসারে, দেবদাসী প্রথা একাদশ শতক নাগাদ তৎকালীন বাংলাদেশে যে বিদ্যমান ছিল তার সামান্য তথ্য পাওয়া গেছে, কিন্তু পরবর্তী শতাব্দীগুলীতে এর কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না এবং ভাতজংলার ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন নজির হিসাবে বিবেচিত হতে পারে বলেই আমার অনুমান, অন্ততঃ ভারতের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়কালে। 

পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জেলা নদীয়ার একটি ঐতিহাসিক শহর কৃষ্ণনগরের সীমান্তে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক-এর পাশে অবস্থিত ভাতজংলা হল একটি বড় গ্রাম যার জনসংখ্যা প্রায় পনের হাজার (আমার অনুসন্ধানের সময়কালে), যার মধ্যে ৮০ শতাংশই শিক্ষিত। ১০ নভেম্বর, ’৯৮, আমি সেই গ্রামে কয়েক ঘন্টা কাটিয়েছিলাম এবং জ্যোৎস্না, সেই তথাকথিত ‘দেবদাসী’ সহ কয়েকজন গ্রামবাসীর সাথে দেখা করেছিলাম। এই গ্রামেরই অধিবাসী পার্থ সিকদার। তিনি একজন স্থানীয় সিপিআই (এম) কর্মী। তিনিই আমায় ভাতজংলা গ্রাম পরিদর্শনে ও অনুসন্ধানে সাহায্য করেছিলেন। একটি বাম অধ্যুষিত গ্রামে একজন মহিলাকে এক নির্বাক মূর্তির বধূতে পরিণত করার ঘটনার গুরুত্ব সম্পর্কে তার অজ্ঞতা তিনি আমার সাথে আলোচনার সময় স্বীকার করে নিয়েছিলেন। 

তিনিই আমাকে এক মধ্যবয়সী পুরোহিত বাদল মিশ্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, যিনি স্থানীয় ‘বাবা মা’-র মন্দিরের – বাবা (ভগবান শিব) এবং মা (মা কালী)- তৎকালীন পূজারী। বাদল মিশ্রের বাবা ঐ একই মন্দিরের প্রাক্তন পূজারী বামদেব মিশ্রই তিন বছর আগে জ্যোৎস্নাকে ঐশ্বরিক বধূ হতে রাজি করিয়েছিল। 

বামদেব মিশ্র উড়িষ্যার ভদ্রক জেলার অন্তর্গত গদাধরপুর গ্রামের মানুষ। ১৯৯৭ সালে তার মৃত্যুর পর তার ছেলে (বাদল) মন্দিরের দায়িত্ব নেন। বাদল মিশ্র উপরোক্ত দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টের ঘটনাটি নিশ্চিত করেন। তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে তিনি এই বিষয়ে তার বাবার বিরোধিতা করেছিলেন, যদিও আমি তার নিজের রাজ্যে (উড়িষ্যা) এই প্রথার বিষয়ে তার অবস্থান জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। আমরা মন্দিরের চাতালে বসে যখন কথা বলছিলাম তখন সেখানে কিছু গ্রামবাসী জড়ো হয়েছিল। তারা অবশ্য তাদের গ্রামে এই ঐশ্বরিক বিবাহের ঘটনায় তাদের গর্ব প্রকাশ করছিল। 

এরপর আমি শিকদার মশায়ের পরামর্শে মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা নগেন্দ্রনাথ দত্তের সাথে দেখা করতে যাই। পেশায় একজন চিকিৎসক এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র একজন রাজনৈতিক সমর্থক এবং হিন্দু ধর্মে দৃঢ় বিশ্বাসী শ্রীদত্ত (তখন বয়স ৭৩), যিনি বামদেব মিশ্রকে কয়েক বছর আগে মন্দির প্রতিষ্ঠার পরে পূজারী নিয়োগ করেছিলেন, তিনি আমাকে বলেছিলেন যে তিনি জ্যোৎস্নাকে চিনতেন, কিন্তু ঐ বিয়ের আগে তিনি তার কাছ থেকে বা পুরোহিতের কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছুই শুনতে পাননি এবং গ্রামে এরকম অনুষ্ঠানের জন্য তিনি অনুতপ্ত। এমনকি কয়েকশ গ্রামবাসী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি আরও বলেন, এটা হতে পারে যে পুরোহিত এবং তার সহযোগীরা গ্রামে এমন ঘটনায় তাঁর সমর্থনের অভাব সম্পর্কে আগেভাগেই নিশ্চিত ছিলেন। “কিন্তু এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং এটি এই গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকায় কোনও স্থায়ী প্রভাব তৈরি করতে পারে নি”,- আমি ঘটনার পরিণতি জানতে চাইলে শ্রীদত্ত এমনটাই বলেন। এর সঙ্গে পতিতাবৃত্তির কোনো সম্পর্ক নেই বলেও তিনি নিশ্চিত করেন। উপস্থিত সিকদার মহাশয়ও তার সাথে সহমত হন। 

কিন্তু জ্যোৎস্না কেন পুরোহিতের কথায় রাজি হল? উত্তরটা পেয়েছিলাম যখন ভাতজংলা গ্রামের একটি পাড়া নতুন কালীপুরে তার বাবার বাড়িতে তার সাথে দেখা হয়েছিল। বাদল মিশ্র আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে তার এবং তার বাবা-মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। 

প্রথম নজরেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে জ্যোৎস্না (যে নামের অর্থ চাঁদের আলো) দেখতে ভাল ছিল না এবং তার শারীরিক ত্রুটি ছিল। সে নাকিসুরে কথা বলে, অর্থাৎ সে নাক দিয়ে কথা বলে। আমি তার মা-বাবার সাথে আলোচনা থেকে বুঝেছি যে সে যখন বেশ ছোট ছিল, তারা তাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তার শারীরিক ত্রুটির কারণে পাত্র জোটেনি। শেষ পর্যন্ত, তার অবিবাহিত থাকার অনিবার্যতা অনুমান করে তারা তাদের প্রচেষ্টা ছেড়ে দেন। 

আলোচনার সময় জানতে পারি, জ্যোৎস্না ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে গোপালের (শিশু ভগবান কৃষ্ণ) পূজা করত। যখন সে একজন পূর্ণ যুবতী হয়ে উঠল, আমার সামনে তার বক্তব্য অনুসারে, স্বপ্নে সে গোপালের বাঁশি বাজানোর শব্দ শুনত। এমনকি সে জেগে ওঠার সময় গোপালের পায়ের শব্দও শুনতে পেত। ‘‘কিন্তু তুমি কি এখন পর্যন্ত তার সাথে দেখা করেছ?’’, আমি জিজ্ঞেস করলে সে তৎক্ষণাৎ জবাব দেয়, ‘‘হ্যাঁ, পরশুই তো এসেছিল।’’ 

তার মনের এই অবস্থা অবশ্যই তার মানসিক বিচ্যুতিকে প্রমাণ করে যাকে ডাক্তারি ভাষায় সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia) বলা যেতে পারে। 

আলোচনার মাধ্যমে আমি আরও জানতে পারি যে জ্যোৎস্না ওই মন্দিরে নিয়মিত যেত এবং সেখানে পুরোহিতের সাথে পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তারা ঘনিষ্ঠ হয়। প্রতারক পুরোহিত, সম্ভবত মন্দিরটিতে উড়িষ্যার ধরণের দেবদাসী প্রথা চালু করাতে চেয়েছিল। এতে আরও ভক্তদের আকৃষ্ট করা এবং তার আয় বৃদ্ধি তার গোপন উদ্দেশ্য ছিল বলে আমার অনুমান। পুরোহিত জ্যোৎস্নার মানসিকভাবে দুর্বল অবস্থার এবং হিন্দু সমাজে দীর্ঘদিন ধরে অবিবাহিত থাকার ফলে তার সামাজিক মর্যাদাহানির সুযোগ নিয়েছিল। 

শেষ পর্যন্ত প্রতারক পুরোহিতটি একটা গল্প বানিয়ে তাকে রাজি করিয়েছিল যে, ঈশ্বর নিজেই তাকে বিয়ে করতে চেয়েছে, যেমন দৈনিকটিতে রিপোর্ট করা হয়েছিল। 

যাইহোক, জ্যোৎস্না, আমার সাথে আলাপচারিতার সময় উল্লিখিত প্রতিবেদনের বিপরীতেই বলেছিল যে তার বিয়ের কয়েক মাস পরে সে বেশ হতাশা বোধ করেছিল; পরিবর্তে, সে তার আনন্দ প্রকাশ করে। “আমি এখন আমার স্বামী হিসাবে আমার গোপালকে নিয়ে বেশ খুশি যেমন আমি ছিলাম যখন বাবা (পুরোহিত) আমাকে প্রস্তাব করেছিলেন”।

তার বিয়ের অনুষ্ঠানের পরে, পুরোহিত দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছিল যে সে রহস্যময় পদক্ষেপের মাধ্যমে একদিন একটি সন্তানের মা হবে। যাইহোক, এমনটা এখনও পর্যন্ত ঘটেনি (অন্তত যখন আমি কয়েক বছর আগে জায়গাটি পরিদর্শন করি)।

জ্যোৎস্নার বর্তমানে (গত শতাব্দীর শেষের দিকে যখন আমি তার সাথে দেখা করি) মন্দিরের সাথে কোন নিয়মিত যোগাযোগ নেই এবং সে তার সময় কাটায় গৃহকর্মে নিজেকে নিযুক্ত রেখে এবং তার মা-বাবার বাসায় গোপাল মূর্তি পূজা করে।

প্রায় প্রতিবন্ধী ৮৫ বছর বয়সী নলিনীকান্ত দত্ত অবশ্য তার হতাশা লুকাতে পারেননি যখন আমি জিজ্ঞেস করলাম কোন পরিস্থিতিতে তিনি মূর্তির সাথে তার মেয়ের বিয়েতে সম্মতি দিয়েছেন। শ্রীদত্ত নিশ্চয়ই খুশি হতে পারতেন যদি তার বড় মেয়ে স্বপ্না দত্তের (বিয়ের পরে- রায়) মতো একজন মানুষের সাথে তার ছোট মেয়েরও বিয়ে হত। কিন্তু একজন সামান্য অঙ্কের পেনশন ধারক (প্রতি মাসে 1500 টাকা) শ্রীদত্ত তার দুর্বল আর্থিক পটভূমির কারণে পুরোহিতের বিরোধিতা করতে পারেননি। উপরন্তু, তিনি তেমন দৃঢ়চেতা চরিত্রের মানুষ বলেও এই প্রতিবেদকের মনে হয়নি। 

এছাড়া, তার নিকটবর্তী প্রতিবেশীরা যারা ঐশ্বরিক বিবাহ অনুষ্ঠান উপভোগ করার এমন সুযোগ হারাতে আনাগ্রহী ছিল তারা তাকে পুরোহিতের মতে মত দিতে প্রভাবিত করেছিল। এমনকি তার পাশের বাড়ির একজন প্রতিবেশী ক্ষিতিশ দাস নিজেই এই বিবাহ অনুষ্ঠান উদযাপনের দায়িত্ব নিয়েছিল। অনুষ্ঠানে আনুমানিক পাঁচ শতাধিক গ্রামবাসী উপস্থিত ছিল। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে তাদের মধ্যে মিষ্টি বিলি করা হয়েছিল। এসব শ্রীদত্তের বক্তব্য থেকে জানা গেছে। শ্রীদত্ত ও তার স্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও প্রতিটি আয়োজনের জন্য বাধ্যতামূলক অর্থ প্রদান করা ছাড়া তাদের আর কোন ভূমিকা ছিল না। 

আমি জ্যোৎস্নার সাথে আলাপচারিতায় ব্যস্ত থাকাকালীন কয়েকজন প্রতিবেশী মহিলা আমাকে কৌতূহলবশত দেখতে আসে। তাদের মধ্যে একজন হল পূর্বোক্ত ক্ষিতিশ দাসের স্ত্রী ছায়া দাস, যে খোলাখুলি বলে, ‘‘আমরা ঐশ্বরিক বিবাহ সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি কিন্তু দেখিনি। আমরা নিজের চোখে এমন অনুষ্ঠান দেখতে পেরে এবং নিজের জায়গায় এমন পবিত্র অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে পেরে যথেষ্ট খুশি।’’ সেখানে উপস্থিত অন্যান্য মহিলারা, যাদের বেশিরভাগই বিবাহিত, তাকে সমর্থন করে। শ্রীমতী দাসের যুবতী কন্যাও মহিলাদের মধ্যে ছিল। 

কিন্তু যখন আমি শ্রীমতী দাসকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘আপনার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব যদি কোনো মূর্তির সাথে করা হয় তাহলে আপনি কি রাজি হবেন?’’, চটজলদি জবাব ছিল- “না”। ‘‘বাবার মৃত্যুর পর জ্যোৎস্নার ভবিষ্যৎ কী?’’- শ্রীমতী দাস অবশ্য এবার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল, ‘‘ভগবান ওর সমস্যার সমাধান করবে।’’ 

এই অভিযানে আমার শেষ দেখা হয়েছিল জ্যোৎস্নার ছোট বোন স্বপ্না রায়ের সাথে। শ্রীমতী রায়, স্থানীয় শক্তিনগর হাসপাতালের একজন নার্স। তিনি তার সন্তানদের সাথে নিয়ে পৈতৃক বাড়িতেই আলাদা থাকেন। তার বড় বোনের ঐশ্বরিক বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করায় বলেন: “সে তার যা পছন্দ তাই করেছে, আমার বলার কিছু নেই”, এবং এইভাবে তিনি আমাকে এড়িয়ে গেলেন।

দেবদাসী প্রথা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ, কিন্তু আমি একজন বাদল মিশ্র ছাড়া এই ঘটনা নিয়ে আওয়াজ তুলেছে এমন কাউকে পাইনি। বাদল মিশ্র আমাকে স্টেশনে ছাড়তে এসেছিল সন্ধ্যা নাগাদ। ট্রেনে ওঠার আগে আমি তাকে ১০ টাকার একটা নোট দিলাম। আমায় সাহায্য করার পারিশ্রমিক। সেদিন আমার কাছে বিশেষ কিছু ছিলনা। টাকার পরিমাণ খুব কম, কিন্তু এই অল্প প্রাপ্তিতেই তার মুখ উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল এবং তারপর সে আমাকে পরের বার তার মন্দির আবার আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে চলে গেল।

ট্রেনে আসার সময় আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম যে অন্য রাজ্য থেকে আসা এই খালি পায়ের, এলোমেলো খাটো পোশাক পরা ব্রাহ্মণটি কীভাবে তার নিজের পিতারই একটি খারাপ উদ্দেশ্যের বিরোধিতা করার সাহস করেছিল, যখন অনেক গ্রামবাসীর সমর্থনে তা ঘটেছিল এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন নীরব ছিল!

ঘটনা ঘটার পর গত তিন বছরেও কেউ এগিয়ে আসেনি নির্যাতিতা নারীটির পুনর্বাসনে; যত ক্ষণ গ্রামে ছিলাম অন্তত এই বিষয়ে কিছুই শুনিনি।

এত বছর পরে জ্যোৎস্না বেঁচে আছে কিনা জানি না। জানা নেই বেঁচে থাকলেও সে কেমন আছে?

(নিবন্ধটি প্রথম লেখা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। পুনর্লিখন: নভেম্বর ২২, ২০২২)


ভারতীয় সমাজে বিংশ-একবিংশ শতকেও নানাপ্রকারের কুপ্রথা বিদ্যমান। শুধু দেবদাসী প্রথাই নয়, আছে কন্যাভ্রূণ হত্যা, শিশুকন্যা হত্যা, শিশুবিবাহ, সতীদাহ, ডাইনি সন্দেহে হত্যা, মায় শিশুবলি পর্যন্ত। পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে হত্যা-ও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এসবই ভারতীয় আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ঘটে চলেছে তবুও। অনেক কারণের মধ্যে সর্বাধিক উল্লখযোগ্য কারণটি হল, আইন প্রণয়নকারী ও আইন রক্ষকদের নক্কারজনক ভূমিকা। ১৯৮৭ সালে সতীপ্রথা’র নামে যেদিন রূপ কানোয়ার-কে জোর করে মৃত স্বামীর সাথে জলন্ত চিতায় জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় সেদিন সেখানে যারা জড়ো হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিল সরকারি ও বিরোধী দলের ঝান্ডাধারীরাও। না, তারা এই নৃশংশ হত্যাকান্ডের কেউ বিরোধিতা করেনি, ‘ধর্ম’রক্ষার পাহারাদারী করেছিল। সতীদাহ বে-আইনী, কিন্তু সেদিনের একজন হত্যাকারীরও এপর্যন্ত শাস্তি হয়নি, প্রমাণাভাবে সবাই বেকসুর খালাস পেয়ে গেছে। রূপ কানোয়ারের ঘটনাটি স্বাধীন ভারতে ছিল ৩৮তম সতীদাহ-র ঘটনা।

স্বাধীনতার পর থেকে কেবলমাত্র রাজস্থানেই অন্তত ৩০টি সতীদাহের ঘটনা ঘটেছে, যার কোনো প্রমাণ নেই। রূপ কানোয়ারের পরেও এমন ঘটনা কিন্তু থেমে থাকেনি এদেশে।




আমাদের দেশে দেবদাসী প্রথা আজও টিকে থাকার পিছনে আছে হীন কায়েমি স্বার্থ- গরিব মানুষ নিজেদের মেয়ে বেচে পরিবারের মুখে অন্ন যোগাবে আর ধনী ভূস্বামীরা ধর্ম ও ঐতিহ্য রক্ষার নামে নিরোগ কচি মেয়ের শরীর ভোগ করবে।এর সাথে জড়িত পুরোহিত-দালাল-ব্যবসায়ীদের স্বার্থ।আছে বড় বড় শহরের মালিক-মালকিনদের স্বার্থ। এই মিলিত স্বার্থের বলি হয়ে চলেছে নিষ্পাপ শিশুকন্যারা।


আদিবাসী সমাজের মধ্যেও অনেক কুপ্রথা বর্তমান, যেমন ডাইনিহত্যা, জাদুকরী শিকার (witch hunting)-এসবের পিছনেও থাকে কায়েমি স্বার্থ।এমনকী শিশুবলির মত ঘটনাও বিরল নয়। আইন আছে তাতে কি? শিশুবিবাহ প্রতিরোধ আইন আছে (Prohibition of Child Marriage Act, 2006), তাতে কি শিশুবিবাহ বিলোপ হয়েছে? শিশুশ্রম প্রতিরোধ আইন আছে, তাতে শিশুশ্রম বিলোপ হয়েছে কি? কারণ আইন প্রণীত হলেও আইনরক্ষকদের তা প্রয়োগের সদিচ্ছার অভাব।সরকারী ভাষ্যে অবশ্য শিশুশ্রমিকের সংখ্যা পড়তির দিকে, যদিও সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে।জঙ্গীদমনে যে সরকারী তৎপরতা ইদানিং দেখা যাচ্ছে তার এক শতাংশও কি সামাজিক কুপ্রথা নিবারণের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে? আসলে জঙ্গীদমনের লক্ষ্য হল জল-জমিন-জঙ্গল-কে অবাধ লুন্ঠনের জন্য পুঁজিপতিদের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া, তাই সদিচ্ছার অভাব নেই।আর কুপ্রথায় জনগণ নিমজ্জিত থাকলে তারা অধিকার দবি করবেনা, তাই এক্ষেত্রে সদিচ্ছার অভাব।আইন? সে কেবলমাত্র মুখরক্ষার তাগিদে, বহির্বিশ্বকে বোকা বানাতে।


শুরুতেই বলেছি কেন এই নিবন্ধ রচনায় হাত দিয়েছিলাম। দেবদসী প্রথার মাহাত্ম প্রচার বা কেবলমাত্র তাদের জীবনগাথা তুলে ধরা আমার লক্ষ্য ছিলনা, বরং এই কুপ্রথার স্বরূপ উন্মোচন করাই ছিল আমার লক্ষ্য।নিবন্ধটি পাঠ করে যদি পাঠক এই কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন ও সমাজসংস্কারে আগুয়ান হন তবেই আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।


এই নিবন্ধটি রচনায় আমার কাছে প্রথম প্রস্তাব আসে নারীসমস্যা বিষয়ে কর্মরত এক মহিলা অ্যাকটিভিস্টের তরফে। ২০১২ সাল নাগাদ লেখক তরুণ বসু নিবন্ধটি পাঠ করে প্রকাশনায় উদ্যোগী হন, যদিও তাঁর উদ্যোগ কোন কারণে মাঝ পথে থেমে যায়। সেসময়েই এই ভূমিকা লেখার সূত্রপাত। পরে ২০১৬ সালে আমার কাছ থেকে পান্ডুলিপি নিয়ে যায় এক প্রকাশনা সংস্থা। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা প্রকাশকের সেলফেই থেকে যায়, অনামী লেখকদের ক্ষেত্রে এমন তো হয়েই থাকে। অবশেষে আর এক প্রকাশকের তাড়নায় এই উদ্যোগ।


চলুন এবার আমরা মূল নিবন্ধটিতে প্রবেশ করি।


রবি রায়

কোননগর

ডিসেম্বর ২৫, ২০২২


go to next page 

















Studing Languages II English Proverbs ll Brain Tech Tutorial

 

Studing Languages II বাংলা প্রবচন-Bengali Proverbs






দিয়ে প্রবাদ প্রবচন

✍

1. হওয়া ভাতে কাঠি: 

কাজ শেষ হয়ে গেলে তাতে সাহায্য করতে আসা

2. হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা: সৌভাগ্যে পাওয়া সুযোগ বুদ্ধিদোষে নষ্ট করা

3. হংসমধ্যে বকো যথা: 

সুন্দরের মধ্যে অসুন্দরের উপস্থিতি; গুণীজনের মাঝে মূর্খের বিসদৃশ উপস্থিতি।

4. হক কথায় আহাম্মক রুষ্ট

উচিত/সত্য কথা বললে নির্বোধ ব্যক্তিরা রাগ করে এবং বুদ্ধিমান সন্তুষ্ট হয়

5. হাতে মারি না ভাতে মারি

হাতে মারার চেয়ে ভাতে মারা অনেক নিষ্ঠুরতার কাজ

6. হাতে দই পাতে দই তবু বলে কই কই

নিমন্ত্রণবাড়ীতে ভূরিভোজ করেও আশ মেটে না; যেন কোনদিন কিছু খায় নি

প্রাচুর্য সত্বেও অভাববোধ যায় না

7. হক কথায় দেবতা তুষ্ট, উচিৎ কথায় মানুষ রুষ্ট

দেবতুল্যলোক উচিৎ কথা শুনে সন্তুষ্ট হন, কিন্তু সাধারণ মানুষেরা উচিৎ কথা শুনে ক্ষেপে যায়

8. হক কথায় বন্ধু বিগড়ায় / হক কথায় মামা বেজার

সত্যকথা কেউ শুনতে নারাজ; সত্যকথা বললে আপনজনও অপছন্দ করে; সুতরাং মা ব্রুয়াৎ সত্যমপ্রিয়ম

9. হক কথার ভাত নেই: 

উচিত/সত্য কথা দাম পায় না

10. হাতে কালি মুখে কালি বাছা আমার লিখে এলি

ছেলে লিখুক বা না লিখুক হাতে মুখে কালি থাকলে মায়েরা ভাবে ছেলে তার লিখেপড়ে এসেছে

11. হাতির পাঁচ পা দেখা: 

অহঙ্কারী ব্যক্তির দাম্ভিক আচরণ

12. হক কথার মার নেই: 

সত্য কথা বলায় বিঘ্ন নেই

13. হাতি মরলেও লাখ টাকা: 

মহার্ঘ বস্তু সবসময় মহার্ঘ থাকে

14. হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল: 

বিজ্ঞরা যেখানে ব্যর্থ সেখানে নির্বোধ এসে নাক গলায়; সবল যে কাজ করতে ব্যর্থ, দুর্বল সেই কাজ করতে এগিয়ে যায়

15. হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী: 

যেমন হাঁদারাম রাজা তেমনি গাধারাম মন্ত্রণাদাতা

অকর্মণ্য ব্যক্তির ততোধিক অযোগ্য দোসর

নির্বোধ লোকের নির্বোধ পরামর্শদাতা

মূল প্রবাদটি হল ভবচন্দ্র রাজার গবচন্দ্র মন্ত্রী; (উৎসকাহিনী- ভবচন্দ্র ছিলেন কামরূপের রাজা গোবিন্দচন্দ্রের পুত্র; তাঁর আসল নাম ছিল উদয়চন্দ্র; ডাকনাম ছিল ভবচদ্র; তিনি ছিলেন অচতুর; তাঁর মন্ত্রীও ছিলেন তেমনি নির্বোধ; সেইজন্য ভব, হব বা হবু হয়েছেন (হাবারাম অর্থে) এবং মন্ত্রী গব বা গবু হয়েছেন (গবারাম অর্থে)

16. হবু ছেলের অন্নপ্রাশন: 

আগাম সুখকল্পনা; পরে কি হবে না জেনে আগে থেকেই প্রস্তুতি;
সমতুল্য- 'কালনেমির লঙ্কাভাগ'; 'রাবনের ছাদনাতলা'; রাম না হতেই রামায়ণ' ইত্যাদি

17. হাড়ে দূর্বা গজানো: 

জমি পড়ে থাকলে দূর্বা গজায়, - অত্যন্ত অলস; আলসেমি এমনমাত্রার যে দূর্বাও সেখানে গজানোর সুযোগ পায়

18. হাড় এক ঠাঁই মাস এক ঠাঁই: 

প্রচণ্ড প্রহারে ক্ষতবিক্ষত

19. হ----

কাজে বিশৃঙ্খলা; গোলমেলে ব্যাপার

20. হয় না-হয় বিয়ে, ঢাক বাজাও গিয়ে: 

বিয়ে হবে কিনা ঠিক নেই তারজন্য আগাম ব্যস্ততা; আদিখ্যেতা, বাড়াবাড়িসমতুল্য- 'হবু ছেলের অন্নপ্রাশন'

21. হয় যদি তিলটা, কয় তবে তালটা: 

(বা তিলকে তাল করা’)ঘটনার বর্ণনায় বাড়াবাড়ি

22. হাটকানা: 

হাটে নানারকম জিনিসপত্র দেখে যার তাক লেগে যায়, কোনটা কিনবে ঠিক করতে পারে না

23. হরি বড় দয়াময়, কথায় বটে কাজে নয়

অবিশ্বাসীর দেব-দ্বিজে অভক্তি; বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন; কোন ব্যক্তিকে লোকে দয়ালু বলে জানে অথচ অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে

24. হরি বাঁচান প্রাণ, বৈদ্যের বাড়ে মান: 

একজন কাজ করে; অন্যজন তার সুখ্যাতি কুড়ায়; কাকতলীয়ভাবে কেউ কোন কাজের কৃতিত্ব পেলে এই প্রবাদ বলা হয়; সমতুল্য- 'ঝড়ে কাক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে'

25. হাঁড়ির ভাত একটা টিপলেই সবার খবর মেলে: 

দলের একজনকে চিনলেই সবাইকে চেনা যায়

26. হরি ঘোষের গোয়াল: 

নিস্কর্মা লোকেদের আড্ডাস্থল;

(উৎসকাহিনী- কোলকাতা নিবাসী হরি ঘোষ নিস্কর্মা আত্মীয়দের প্রতিপালন করতেন; কোন নিস্কর্মা ব্যক্তি একবার তাঁর শরণ নিলেই তার আশ্রয় পেত; এইসব লোকের আবাসস্থল হওয়ায় তাঁর বাড়ির নাম হয়েছিল- 'হরি ঘোষের গোয়াল'; কথায় বলে- 'হরি ঘোষের গোয়াল পেয়েছে'; 'হরি ঘোষের গোয়াল বানিয়ে ফেলেছে')

27. হাঁটু জলে ডুবে মরা: 

সামান্য বিপদে নাজেহাল হওয়া

28. হরি মটর খেয়ে থাকা: 

উপবাসে থাকা; যেদিন অন্নের কোন সংস্থান থাকে না সেই দিন লোকে বলে আজ হরিমটর খেয়ে থাকতে হবে

29. হরিণের শত্রু তার মাংস: 

মাংসের লোভে বাঘ হরিণ মারে; হরিণ নিজেই নিজের শত্রু;

30. হরেদরে কাশ্যপ গোত্র: 

যার জাতি বংশ পরিচয় অজ্ঞাত; সমতুল্য- 'জাত খুইয়ে কাশ্যপ গোত্র'

31. হরিণের শিঙে মাছি বসে না

সদা চঞ্চল হরিণের শিঙ- মাছি বসতে পারে না; গতিশীল মনে ময়লা ধরে না; সমতুল্য- 'গড়ানো পাথরে শ্যাওলা ধরে না'

32. হরিহর আত্মা: 

অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু; সমতুল্য- ‘জগাই-মাধাই’

33. হোদল বনে শিয়াল রাজা: 

অজ্ঞানীদের মাঝে অল্পজ্ঞানী যথেষ্ঠ সম্মান পায়

সমতুল্য- ভেড়ার দলে বাছুর মোড়ল

34. হ্যাপায় পড়ে স্রোতে ভাসা: 

দায়ে পড়ে কাজ করা

35. হোঁচট খেয়ে পদ্মনাভ // হোঁচোট খেয়ে প্রণাম

উল্টে পড়ে গিয়ে প্রণাম স্বীকার; প্রণাম না করেও প্রণাম; কার্যগতিতে কোন ভালো কাজ করা; 

সমতূল্য- 'উচোট খেয়ে প্রণাম'

36. হোঁতা (থোতা) মুখ ভোঁতা 'লো

দর্পচূর্ণ 'লো

37. হোক-না-কেন কাঠের বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারলেই ': 

উপায় যাই হোক-না-কেন কার্যসিদ্ধি 'লেই '

38. হেসে হেসে কথা কয় হাসি তো ভাল নয়: 

কুটিল ব্যক্তি হেসে হেসে কথা বললে মনে সন্দেহ জাগে

39. হিসাবের গরু বাঘে খায় না:

হিসাব করে চললে ভাল বই মন্দ হয় না

40. হারামের পয়সায় আরাম নেই: অসদুপায়ে অর্জিত অর্থের কোন মূল্য নেই

41. হায়রে আমড়া কেবল আঁটি আর চামড়া: 

বাইরে চাকচিক্য ভেতরে শূন্যতা; দেখে আদর করে নিয়ে পরীক্ষায় অসারত্ব উপলব্ধি করা

42. হাতের শাঁখা দর্পণে দেখা: ঘোরাপথে বা বাঁকাপথে কাজ করা


not yet completed


A Look into the History of Geisha of Japan

The history of geisha is deeply intertwined with the cultural history of Japan. The term "geisha," which translates to "art person," first appeared in the 17th century to distinguish these skilled entertainers from courtesans and prostitutes. Geisha were trained in a variety of traditional arts, including music, dance, and the art of conversation, and they were often hired to provide entertainment at parties for businessmen and other elites. Their role was not only to entertain but also to add an element of chic and gaiety to these gatherings.
In the 18th century, the geisha culture reached its zenith in the pleasure districts of Edo, now known as Tokyo. Geisha were considered the epitome of grace and beauty, and their company was highly sought after. However, the onset of World War II led to a decline in the geisha tradition, as many women were required to work in factories. After the war, the geisha culture struggled to regain its former prominence, but it has managed to survive, albeit in a diminished capacity.
Today, geisha continue to be trained in traditional arts and serve as a symbol of Japan's rich cultural history, acting as a bridge between the past and the present.

রবি রায় ।। কবিতা সংকলন ।। মনের আঙ্গিনায়

বেশরম ইচ্ছে
রবি রায়

মাঝে মাঝে বেশরম ইচ্ছে জাগে মনে
কেউ আমার সকালের ঘুম ভাঙ্গাক এই বলে-
হ্যাঁগো, চা খাবে না,
অনেক যে বেলা হয়ে গেছে।
আমি ঘুম চোখে বলি-
আর একটু ঘুমিয়ে নিই, চোখ খুলতে পারছিনা।
তারপর ধড়ফড় করে উঠেই পড়ি-
সকাল সাড়ে সাতটার ট্রেনটা ধরতে না পারলে
অপিসের হাজিরাখাতায় লেট সাইন পড়বে,
তিনটে লাল টিকমার্ক মানে মাস ফুরালে একদিনের বেতন কাটা যাবে,
বাজারের থলিতে টান পড়বে।

এখন অবশ্য আর কোন ভুবনের ভার নেই, দায় নেই দায়িত্ব নেই,
সপ্তাহ শেষে বাজার যাওয়া বা রাতে ফেরার পথে বাজার করা নেই,
বাজারের কোন খবরও রাখিনা,
জানিনা কোন ট্রেন কখন এল কখন গেল,
তবুও ভোরের আলো ফুটলেই ঘুম ঘাঙে, কাউকে ডাকতে হয়না,
শীতকালেও ঠাণ্ডা জলে চোখমুখ ধুই,
আগের মত আর বাটিভরা ঈষৎ উষ্ণ জল রাখা থাকেনা,
নিজের চা নাজেই বানিয়ে খাই।

তবে আজও যেন অন্য এক ট্রেন ধরার আতঙ্ক তাড়া দেয়,
তাই ভোরে উঠেই বসে যাই ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিচারণায়!
শুধু মাঝে মাঝে ভুল করে বেশরম ইচ্ছে জাগে মনে-
সকালের চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কেউ যদি ভুল করেও ঘুম ভাঙাতে আসত আমায়!

👱

সময় ছিনিয়ে নিয়েছে জীবন,
বিফল হৃদয় হারিয়েছে মনন,
আজ শুধু ফেটে পড়ে
অসহায় আক্রোশ।
মনের মাঝে বয় অস্থিরতার ঝড়,
কখনোবা হয়ে উঠি উদ্গিরিত গিরি,
কখনোবা বুকে বাজে ক্রুদ্ধ গর্জন
পিঞ্জরে আবদ্ধ এক আহত কেশরীর,
কখনোবা রণসাজে রণক্ষেত্রে আছি,
কখনোবা রাজপথে মিছিলে সামিল।
মন মাতে কখনোবা উদাসী ভাবনায়-
সবকিছু পিছে ফেলে ভবঘুরে হই,
নিজেরে হারাই কোন অচিন পথে,
যে পথে রাখেনি পা কখনতো কেউ।
-রবি রায়

👱

কেউ কেউ তো আছেই এমন
যে তোমারে চায়,
সঙ্কোচেতে মলিন হৃদয়
সাহসভরে বলিতে নাহি পায়
-রবি রায়

👱
তোমাকে খুঁজেছি আমি
রবি রায়
---
তোমাকে খুঁজেছি কতদিন-
সভ্যতার সেই ঊষালগ্ন থেকে
শতসহস্র বর্ষ ব্যাপী
অবিরাম চলেছি আমি আঁকাবঁকা পথে
জীবনানন্দের সাথী হয়ে
তোমাকে খুঁজেছি আমি নাটোরের পথে,
বন্যায় ভেসেছি কতবার শেষের কবিতায়,
শ্রীকান্তের সঙ্গ নিয়ে
কাটিয়েছি কতদিন পিয়ারি সান্নিধ্যে
তোমাকে খুঁজেছি আমি মহাকবির কাব্যে,
কণ্বের তপোবনের খোঁজে
হারিয়েছি পথ কতদিন গহিন অরণ্যে,
পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে
কখনোবা বাল্মিকীর নিরালা আশ্রমে
নিয়েছি আশ্রয় আমি ক্ষণিকের তরে
নির্বাসিতা সীতা যেথা লব-কুশ লয়ে সাথে
প্রতীক্ষায় রত অযোধ্যা নৃপতির
কখনো বাজিয়ে বাঁশী সুরের আবেশে
খুঁজেছি তোমায় কোন দিবারাত্রির কাব্যে,
কল্পনায় ডানা মেলে
কখনোবা উড়ে গেছি নন্দনকাননে
বন্দিনী অপ্সরাদের মাঝে তোমারই সন্ধানে
তোমাকে খুঁজেছি আমি প্রাচীন বৈশালীতে
আম্রপালী নটিনীর হৃদয় কাননে
দেবদিন্ন হয়ে কখনো ডুবেছি আমি
তোমাকেই খুঁজে পেতে
সুতনুকা নাম দেবদাসীর অন্তরসলীলে
কখনোবা চলে গেছি ইতিহাসের পথ বেয়ে
প্রাচীন রোমের কোন নিভৃত কারাকক্ষে,
কাটিয়েছি সেথা কত নিদ্রাহীন রাত
তোমারই প্রতীক্ষায়
শৃঙ্খলিত স্পর্টাকাস হয়ে
তোমারই সান্নিধ্যলাভে
কখনোবা হয়েছি বিভোর হোমারের কাব্যে,
সেক্সপিয়রে বিচরণ করেছি কতদিন,
কল্পনায় মজনু হয়ে মজেছি লায়লায়,
বান্দা হয়ে মর্জিনার বনেছি দোসর
স্রোতস্বিনী নীলতীরে
যেন কোন পটে আঁকা প্রাচীন পুরীতে
হয়েছি মগ্ন কতদিন
আলো আঁধারিত অন্তঃপুরে
স্বপ্নের সুন্দরী সঙ্গমে
গ্রীক সেনাপতি বেশে
তোমারই সন্ধানে
তোমাকে খুঁজেছি আমি মুঘল হারেমে
অতৃপ্ত আরবী উর্বসীদের মাঝে,
কখনোবা তাজমহলের গর্ভগৃহে
কবরে শায়িতা যেথা তাজ শাজাহান পাশে
---
নভেম্বর ০১, ২০২১
👨
হাত বাড়ালেই তোমায় পাব
এমন যদি হত,
কাছেই আছ, দূরে তবু
খাঁচার পাখির মতো।
👨
Perception 
Don't force the flower to bloom, friend, 

''জস তুজু জিস কি থি উস কো তো না পায়া হামনে

ইস বাহানে সে মাগার দেখ লি দুনিয়া হামনে''


''যাকে খুঁজেছিলাম তাকে পাইনি কোনদিন

তবে খুঁজতে খুঁজতে আমার বিশ্ব দেখা হয়ে গেছে।"

উৎসর্গ: 
হারানো স্বপ্নগুলো ফিরে এসে কড়া নাড়ে অবিরত মনের দুয়ারে আমার।-রবি
লেখক পরিচিতি: যৌবনের শুরু
দিন বদলের স্বপ্ন নিয়ে।
গ্রামনগরের ঘরে ঘরে
অবস্থান করেছেন একদা।
এখন আশাহত, তবুও বাঁচেন স্বপ্ন নিয়েই।
বারংবার প্রেমে পরাভূত।
শিক্ষা পৃথিবীর পাঠশালায়।
ঠকতে ভালবাসেন, জীবনভর ঠকেছেনও।
আইকন ফুলনদেবী,
দ্য ফেমাস ব্যানডিট কুইন অফ ইন্ডিয়া।



যদিও রাত্রি
👨
২০.০৯.২০২২
👨
ইচ্ছে হয়

রবি রায়
আজ নিজের খাবার পরের সাথে
আজ ঘর হারাদের পাশে দাঁড়িয়ে
আজ কলম হাতে ঝর্ণাধারায়
আজ কন্ঠ ছেড়ে বেসুর তালে
আজ ছোটকালের স্মৃতি যত
২৯/০৭/২০২১

In a rainy wet day
Rabi Roy
Today is the day
to stand on the porch of a two-story building and watch the rain,
Today is the day
to stand at the crossroads with an umbrella over the head,
Today is the day
of the reunion with the loved one on the bank of the river.
 
Today is the day
to rush to the metropolis to join the procession,
Today is the day
to share the food with the next one on the same plate,
Today is the day
to stand by the homeless and see the world through their eyes.
 
Today is the day
to smile and write down the burns of life in a moody mood,
Today is the day
to write a poem with a fountain pen in hand,
Today is the day
to sing the favorite song and faint to the tune without control.
 
Today is a day
of reminiscence as a childhood memory,
Today is the day
to say goodbye to all having distributed all the books-
my lifelong friends so far,
Today is the day
to tell all- let you all be well.
29/07/2021



যেতে যেতে একলা পথে 
খানিক থামতে মন চায়,
দিনের বেলায় রাতের আঁধার 
থামতে নাহি দেয়।
-রবি রায় 
👤

পথের কাব্য
-রবি রায়-

রোজ সকালে তোমায় দেখি,
এক সারিতেই দাঁড়িয়ে থাকি,
এক যানেতেই যাই দুজনে
বাঁচার সন্ধানে।
পথের মাঝে প্রতিদিনই
উধাও আমায় ফেলে,
কাল সকালে দেখা হবে
জানিয়ে অবহেলে।
ক্লান্ত দেহে দিনের শেষে
ফিরি যখন রোজ,
দৃষ্টি মেলে অবিরত
তোমায় করি খোঁজ।
নিঝুম রাতে ঘুমের ঘোরে
তোমায় পড়ে মনে,
দূরে কোথাও যখন তুমি
আপনজনের সনে।
রাত পোহালে সকাল হলে
থাকি প্রতীক্ষায়,
দেখা কখন পাব তোমার
পথের কিনারায়।
বেলা আমার বয়ে গেছে
তবুও মনে হয়
ভোরের আলো পড়ল বুঝি
মনের আঙ্গিনায়।
দেখে দেখে তোমায় কেমন
নেশায় বিবশ হই,
ইচ্ছে করে সারাটা দিন
তোমার সাথেই রই।
কী নাম তোমার,
জানি না তো কেমন তুমি মেয়ে,
জানি শুধু তোমার চোখে
কাব্য আছে ছেয়ে।
মুখে তোমার দেখি আমি
ইতিহাসের ছবি,
তোমার কথা ভেবেই বুঝি
আঁকেন গ্রীসের কবি।
*
সেদিন যেন মনে হল
আলোয় ভুবন ভরা,
পথটা যেন বদলে গেছে
বদলে গেছি মোরা।
ইতিহাসের পাতা যেন
হঠাৎ এল উড়ে,
তাল মিলিয়ে সময়টাও
বসল আসন জুড়ে।
সাদর সাজের বাহারেতে
স্তব্ধ পথের লোক,
আগুন ঝরা রূপের ছটায়
ঝলসে গেল চোখ।
ট্রয়ের প্রাসাদ পিছে ফেলে
রাঙিয়েছ এই পথ,
বান্দা আমি সেথায় হাজির
সাজিয়ে প্রেমের রথ।
আরবি ঘোড়া ছুটবে কষে
তোমায় নিয়ে সওয়ার,
পিষ্ট হবে পাতক যত
তামাম দুনিয়ার।
চালক হয়ে ছুটব আমি
তোমার পাশে বসে,
হাজার জোড়া ঈর্ষাকাতর
চোখ জ্বলবে রোষে।
আসবে ধেয়ে পিছন হতে
রক্ষী সেনাদল,
চারদিকেতে যাবে শোনা
ভীষণ কোলাহল।
বর্মে ঢাকা দেহ আমার
মাথায় শিরস্ত্রান,
হাতের খোলা তলোয়ারে
ঝরবে অনেক প্রাণ।
যুদ্ধ শেষে হারিয়ে যাব
কোন সুদূরের পার,
সেথায় শুধু থাকব দুজন,
থাকবে না কেউ আর।
থাকবে নাকো দুঃখ জ্বালা,
যুদ্ধ ভাবনা,
আকাশ বাতাস ভরে শুধুই
সুখের বাসনা।
থাকবে সেথায় পাহাড়, সাগর,
নদী বিচঞ্চল,
দিঘীভরা স্বচ্ছ জলে
ভাসবে কমলদল।
দুচোখ ভরে মিলে দুজন
দেখব সবুজ বন,
তারি মাঝে গড়ব মোরা
সাধের নিবসন।
বনের পশু থাকবে সাথে,
গাইবে পাখি গান,
তাদের মাঝে আনন্দেতে
ভরবে মোদের প্রাণ।
চাঁদনী রাতে আলোয় ভরা
সারা ভুবন যখন,
আকাশ তলে মিলব মোরা
মধুর মিলন তখন।
জন্ম নেবে ভোরের আলো
ভরিয়ে তোমার কোল,
সেই আলোতে জগৎজুড়ে
জাগবে কলরোল।
ভাবের ঘোরে তোমায় নিয়ে
স্বপ্ন এমন আঁকি,
রাঙিয়ে তুলি মনের রঙে
রয় না কোনো ফাঁকি।
*
দিন কেটে যায় এমনি করে
আসে নতুন দিন,
তোমার কথা ভেবে ভেবে
হই তোমাতে লীন।
সেদিন দেখি তোমার সাথে
নব্য যুবা এক,
মনটা কেমন মলিন হল,
কন্ঠ নির্বাক।
ক'দিন বাদেই তোমার হাতে
দেখি শাঁখের বেড়ি,
মনে হল তোমায় পেতে
কেউ ঢেলেছে কড়ি।
কাছে এসে সরস হেসে
চোখ ফিরিয়ে নাও,
বাবুর বাঁধা বাঁদী হয়ে
দখিন পানে যাও।
শুভ্রবসন, দেহের সুবাস
কাঙাল করে মন,
কাজ ভুলে সব তোমার কথাই
ভাবি সারাক্ষণ।
সেদিন হতে মরম ব্যথায়
সদাই বিবশ থাকি,
অন্ধকারার আগল পানে
দৃষ্টি মেলে রাখি।
আনমনা মন দিবানিশি
প্রতীক্ষাতে রয়,
আবার যদি হৃদয় জুড়ে
মুক্ত বাতাস বয়।
কল্পলোকে তোমায় নিয়ে
উথালপাথাল চলে,
মিলব আবার দুজনাতে
মনটা যেন বলে।
*
বৃষ্টিভেজা এক সকালে
তোমায় যখন দেখি,
মনটা যেন উঠল হয়ে
পাখনামেলা পাখি।
মনে হল মাঝ আকাশে
উড়ছি যেন আমি,
হাওয়ায় ভেসে আমার পাশে
আছ শুধুই তুমি।
বন্দিশালার আগল ভেঙে
মুক্ত সেথায় মোরা,
মুক্ত তুমি, মুক্ত আমি,
মুক্ত প্রেমের ধারা।
বাঁধনহারা আনন্দেতে
গাইছি মোরা গান-
বাঁচব মোরা বাঁচার মত
ফুটবে নতুন প্রাণ।
মাটির পরশ থেকে দূরে
বাঁধব মোরা ঘর,
মিলব এবার পরস্পরে,
থাকবনা আর পর।
গড়ব মোরা নতুন জীবন
উছল প্রাণের ছন্দে,
বাঁচব আবার নতুন করে
বাঁচার আনন্দে।
*
এসব কথা ভাবি যখন
ভাবতে লাগে বেশ,
জানি তবু পথের নেশা
পথেই হবে শেষ।
-রবি রায়
👨

আমি ভাস্কর-
তুমি রোদ্দুর,
আমি চন্দ্র-
তুমি জোছনা,
প্রিয়তমা, ছেড়ে যাওয়া
কখনো তো হবে না।
-রবি রায়

I am the Sun,
You are the sunlight,
I am the moon,
You're moonlighting,
Breaking up won't happen, dear.
-Rabi Roy
হাত বাড়ালেই তোমায় পাব
এমন যদি হতো 
কাছেই আছ দূরে তবু 
খাঁচার পাখির মত।
-রবি রায়
👤
যারে আমি খুঁজে বেড়াই
পাইনা কেন তারে?
যারে আমি চিহিনা
তবু পিছু নাহি ছাড়ে!
-রবি রায়

👨
Composition: Rabi Roy 
It will resist, too. 
And although it blooms, there will be no form-juice-smell. 
You would think this is a flower- 
Formless-tasteless-odorless.





ষৌবনের দিশারি দিলারা রহমানকে:

মুছে যাওয়া দিনগুলো কেন জানি স্মৃতি হয়ে ফিরে আসে বারবার,


এখন রাত্রি,
অন্ধকার ঘনঘোর,
চারিদিকে হিংস্র শ্বাপদের গর্জন,
মৃত্যুর মলিন ছায়ায় ঢাকা
এখন জীবনের স্পন্দন

এখন রাত্রি,
অমানিশার অন্ধকারে
নিঃসঙ্গ পথিক আমি
চলেছি আলোর সন্ধানে
জীবনের সীমানা পেরিয়ে
দূরে কোন চিতায় চেতনা জ্বলা
শ্মশানের আলো
হাতছানি দেয়,
ও পথ আমার নয়,
আমি সূর্যসন্ধানী

যদিও রাত্রি, তবু জানি
এ আঁধার কেটে যাবে কোনো ক্ষণে,
দিগন্ত রক্তিম হবে নতুন ভোরের আলোয়,
আমি তারই প্রতীক্ষায়---
উদ্ভাসিত, দীপ্তিমান সূর্যের সন্ধানে
-রবি 

👤
শিয়রে শমন নিয়ে শুয়ে আছি আমি,
জীর্ন দেহ হতে বীর্য গেছে ঝরে,
অশক্ত হাতে ঝলকায় না আর খোলা তলোয়ার,
ভেঙে গেছে মন মোর ভণ্ডদের ভীড়ে,
দৃষ্টি ঝলসে ক্ষীণ চাঁদির ঝলকে,
চেতনায় ধরেছে চীড়.
অস্তিত্বে সঙ্কট,
বিভীষিকা তাড়া করে সারা দিনরাত

আঁধারে যোগায় আলো চিতার আগুন,
হিমশীতল এসময় উষ্ণ শুধুই শ্মশান
-রবি


👨

বিনিদ্র কত রাত কাটে বেদনায়,
একা বসে ক্যানভাসে আঁকি এ সময়,
ভাসাভাসা আশা নিয়ে পেতে রাখি কান,
পাই যদি কোনো ক্ষণে প্রাণের সন্ধান,
ক্ষুদে হাতে শিশু এক মারে যদি ঢেলা
কাঁচের কেল্লা হবে ভেঙে খানখান।
-রবি
(মার্চ ১, ২০০২)

👨
আমি স্বপ্নের সদাগর

আমি স্বপ্নের সদাগর,
স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখাই,
স্বপ্নসাগরে ভাসি সদাই,
স্বপ্ন পুষি মনের মণিকোঠায়।

তিলে তিলে স্বপ্ন গড়ি আপন মনের সুখে,
ফিরি করি তাদের কাছে যারা আছে দুখে,
অসম্ভবের সম্ভাবনার ফোটাই কুঁড়ি মনে,
দিন বদলের বাতি জ্বালাই আঁধার ঘরের কোণে।
-রবি

👨

জীবন তো নেই আর বাকি,
পড়তে পড়তে তাই বইয়ের পাতায় পাতায়
দিনভর কত কিছুই না লিখে রাখি,
দিনশেষে অবশেষে ক্লান্ত চোখে
বইয়ের পাতার ভাঁজে ভাঁজে
নিজ হাতে লেখা ইতিহাস খুঁজে খুঁজে দেখি।

ইচ্ছে হয় ঝলমলে এক সকালে
আবার জন্ম নিই,
আলোর আভা গায়ে মেখে
শুরু করি নতুন দিন,
শুরু করি পথ চলা নতুন উদ্যমে
এ দেশ আবার আঠারোয় ভরে যাক,
আমাদের দিন শেষ হোক,
ওরাই ভাঙবে নীরবতা,
নীরবরা বন্দি হোক।
-রবি

👤
ইচ্ছে হয় আবার আঠারো ফিরে পেতে,
বিশাল এ বিশ্বের পথে তোমার হাত ধরে
ইচ্ছে হয় পথ হারাই,
ইস্তাম্বুল থেকে ইতালি,
প্যারী থেকে পিটসবুর্গ,
সাহারা থেকে সাইবেরিয়া তোমার সাথে ছুটে বেড়াই।
ইচ্ছে হয় তোমায় নিয়ে ডুব দিই শান্ত আরব সাগরে,
মাছেদের সাথে জলকেলি সেরে ভেসে উঠি হিমশীতল অতলান্তিকে।
ইচ্ছে হয় শ্রাবণ ধারায় দুজনে মিলে সিক্ত হই,
শরতের হিমেল বাতাসে গা ভাসাই,
বসন্তে নতুন পাতা গজানো গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে
তোমার সাথে লুকোচুরি খেলি।
ইচ্ছে হয় গহিন বনে যাই,
তুলে আনি হলুদবরণ ফুল,
তোমাকে সাজাই,
গাঁয়ের পথে তোমার সাথে বাউল হয়ে ফিরি।
ইচ্ছে হয় দূর আকাশে ডানা মেলে তোমার সাথে উড়ি,
উড়তে উড়তে ঢেউ গুনি নীল সাগরের,
কিম্বা চলে যাই হিমালয়ের কোন ধবল গিরি চূড়ায়,
নিঃসিম নৈঃশব্দ্যের মাঝে
তোমার কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে
জীবনের গান গাই।
-রবি

একা একা অলিগলি
ধীরে ধীরে হেঁটে চলি,
নেই কোনো ভুবনের ভার,
মুছে যাওয়া দিনগুলো
স্মৃতি হয়ে এলোমেলো
পিছু থেকে ডাকে না তো আর।
-রবি

👤
আমার কলমে ভরা আছে ঘুমিয়ে থাকা গরল,
সুযোগ পেলেই ঘটে তার অসংযত নির্গমন।
তাই সচেতন ভাবেই তাকে নিষ্ক্রিয় রাখতে সচেষ্ট থাকি।
যা বেরিয়ে আসতে চায়,
ভিসুভিয়াস থেকে নির্গত তরল লাভার মত উষ্ণ তা।
কলম যখন সচল হয়-
সে চলে তার নিজের মর্জিমাফিক।
তার সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় বিচার বোধের সামনে দাঁড়িয়ে আমার শিরদাঁড়ায় তখন শীতলতার স্পর্শ।
নিজের অস্তিত্বের বিপন্নতা অনুভব করে শিউরে উঠি।
---
কলমে: রবি রায়

👤
ইচ্ছে করে যাই সেখানে
ভোরের পাখি গায় যেখানে
মিষ্টি সুরে গান,
পথটা ফেরার হারিয়ে ফেলি
ঘাসের উপর হেঁটেই চলি,
আসুক ধেয়ে অন্তরেতে
আনন্দেরি বান।
---
কলম: রবি রায়

একা কন্যে
রবি রায়
---
বাবার বাড়ি বারুইপুর
আর মায়ের বাড়ি ময়না,
বছর কয়েক কারো সাথে
কেউ কথাটি কয়না।
বছর দশের মেয়েটাকে
সঁপে মামার হাতে
মা-বাপেতে বছরভর
নিজের কাজে মাতে।
মা মেতেছে সমাজসেবায়
দূরের গোয়ালঘাটে,
বাপটি তার ব্যস্ত সদাই
বারুইপুরের হাটে।
কন্যে তাদের ঘুমের ঘোরে
মা-বাপকে খোঁজে,
মামা-মামি কান্না থামায়
ভুলিয়ে কথার ভাঁজে।

সমাজসেবা-হাটবাজারী
বন্ধ হলো সেদিন,
মেয়ের শব নিয়ে যাওয়ার
শমন এল যেদিন।
মনের দহন প্রাণ নিয়েছে,
চিকিৎসকের রায়,
মামা-মামি জানে শুধু
এ হনন বৈ তো নয়।
---
০২/০৮/২০২১












👨
হৃদ মাঝারে সিঁধ কেটেছে সুন্দরী সে নারী,
পরাণটা যার সোনায় মোড়া, 
লেখনীতে তার ঝর্না ধারা, 
মনটা বড় মায়ায় ভরা- 
আমি কি তারে আসন দিতে নারি? 

👨

 My Heart Is Trembling! 

 A Poem by Rabi Roy


My heart is cut in the middle by her- 
She is a beautiful woman. 
Her heart is wrapped in gold, 
Her fountain style in writing, 
The mind is full of illusions-

Can't I give her a seat in my mind?

👨


চেনা অচেনার ঘোরে
চেনা পথে খুঁজতে হয়না পথ,
চেনা মুখের দেখা পেলে স্বস্তি মেলে,
চেনা কণ্ঠের মিললে সাড়া,
চেনা সুর বাজলে কানে,
চেনা ছন্দে চললে জীবন
মনে সুখের ছোঁওয়া লাগে।
তবু এই চেনা বৃত্তে একদিন
বেঁচে থাকা মনে হয় অর্থহীন।
চেনা বিছানাটা যেন কাঁটা হয়ে বেঁধে,
মন করে আনাগোনা
কখনও মরুঝড়ে সাহারায়,
কখনোবা তুষারপাতে বিদ্ধস্ত সাইবেরিয়ায়,
খাইবারপাস হয়ে কখনোবা মন
হয়ে যায় নিরুদ্দেশ বাবরের দেশে,
ফাহিয়েন হিউয়েন ৎসাঙ মগজে পাকায় গোলমাল,
রামনাথের রথের চাকা পাক খায় মনে বারেবারে,
চেনা মুখের, চেনা সুখের পরিসর ছেড়ে,
মন হয়ে ওঠে ভরপুর ভবঘুরে।
ঠিকানাবিহীন মন
দুনিয়া জুড়ে ঘুরতে থাকে বনবন,
মাঝে মাঝে কখনো উঁকি দেয়
আল্পস্ কিমবা হিমালয়,
পদে পদে বিপদে ভরা এইসব দুর্গম পর্বত,
ঝঞ্ঝায় উত্তাল মাঝ সমুদ্দুর,
উত্তাল সাগরের সফেন সলিল
আর তেপান্তরের মাঠে সহসা হাজির সাইক্লোন
টানে মন,
কান পেতে কখনোবা শোনে মন
ভূস্বর্গে অবিরাম কামানের গর্জন,
বাদশাহী প্রাসাদের ধ্বংসস্তুপে
অশরীরি আরবি রমনীর প্রেমে মগ্ন মন
হয়তবা তৃপ্ত হয় ক্ষণিকের তরে,
ধীরে ধীরে তলিয়ে যাওয়া টাইটানিকে
কখনোবা আরোহী মন
মাতাল হয় মরণ মায়ায়,
পথের পাশে দাঁড়িয়ে দেখা
অচেনা মুখের মিছিলে অজান্তে
শামিল মন,
কখন যেন তাতে কদম মেলায়
আনমনা মন,
খোলা আকাশের নিচে
গ্রাম থেকে তুলে আনা মাঠভরা কালো কালো মানুষের ভীড়ে
কখনোবা মিলে গিয়ে অনুভবে মেলে
না পাওয়া সুখের সন্ধান।
অচেনা এ দুনিয়ায় প্রবেশ অবাধ,
হাতছানি দেয় অবারিত দ্বার,
সেথা হারিয়ে যেতে নেই মানা।
চেনা অচেনার এমনতর দ্বন্দ্বে
কেটে যায় দিন।
চেনা অচেনার ঘোরে দহনে লিপ্ত মন,
মাঝে মাঝে জেগে ওঠে সুপ্ত নয়ন,
চেনা মুখ মাঝে মাঝে কেমন যেন অচেনা হয়ে যায়,
ছায়া পড়ে তাতে মনের কোণে যতনে লুকানো কালিমা,
মধুমাখা চেনা স্বর
মনে হয় কর্কশ,
চেনা স্বরে যেন বিষধর সর্পের হিসহিস ধ্বনি,
স্বার্থের বিষে জ্বলে কর্ণকুহর,
সহসা হারিয়ে যায় কোনো কাছের হৃদয়,
কালকে যা ছিল চেনা -
আজ যেন বড়ই অচেনা দেখায়,
পথের কিনারে তাই কখনোবা থমকে দাঁড়ায়
সচল হৃদয় এক মেলাতে হিসেব।
চেনা জানা যতকিছু ছেড়ে মন
পালিয়ে বেড়ায় হেথাহোথা যখন তথন,
নাজানা কিসের যেন খোঁজে চেনা বৃত্তের বাইরে
মাঝে মাঝে ছুটে যায় মন,
তবু তাকে সামলে রাখে
যেন কিসের আকর্ষণ।
অবিরত এই দ্বন্দ্বই বুঝিবা জীবন
যা সাগরে ডুব দেয় মুক্তের খোঁজে
আবার ডুবতে ডুবতে আঁকড়ে ধরে খড়কুটো,
মধ্যরাতের আঁধারের মোহে কখনোবা বিবশ হয়,
থাকে তবু নব সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষায়।
-রবি রায়

👨

খিদে

আচ্ছা বলো তো তোমার কি খিদে পায়?
হা হা হা হা...

এক পাকশালার পাশেই আমার শয়নকক্ষ,
তাই ঘ্রাণে অর্ধভোজন হয়েই যায়,
বাকিটা পুষিয়ে নিই আনমনে পথচললার সময়ে দৃষ্টির মাধ্যমে।

কবি বলেই তো খিদে আমার একটু বেশি পায়, মনের খিদে,
সে খিদে পুরনে কেউ ঘেঁসেনা তেমন আমার কাছে
যারা আছে আমার আশেপাশে,
সদাই জ্বলে দাউ দাউ করে আমার মনের উদর তাই!

যেদিক পানেই চাই
দেখি মনের মানুষ নাই।
-রবি রায়
29/10/20222

👨

বৃষ্টি ভেজা দিনে


আজ দোতলা বাড়ির বারান্দায়
দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টি দেখার দিন,
আজ চৌরঙ্গী মোড়ে
ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে থাকার দিন,
আজ নদীর পাড়ে প্রিয়ার সাথে
সঙ্গোপনে মিলনের দিন
আজ মিছিলে পা মেলাতে
মহানগরে ছুটে যাবার দিন,
এক পাতেতে ভাগ করে খাবার দিন,
তাদের চোখে দুনিয়া দেখার দিন
আজ নিজের খাবার পরের সাথে
এক পাতেতে ভাগ করে খাবার দিন,
আজ ঘর হারাদের পাশে দাঁড়িয়ে
তাদের চোখে দুনিয়া দেখার দিন

আজ মুচকি হেসে খোস মেজাজে
প্রাণের দহন লিখে রাখার দিন,
কাব্য করার দিন,
বেহুঁশ হওয়ার দিন

রোমন্থনের দিন,
আজ এতকালের প্রাণের সখা বইগুলো সব
বিলিয়ে দিয়ে 'বিদায়' বলার দিন,
আজ 'তোমারা সবাই ভালো থেকো'
জানিয়ে দেওয়ার দিন।



বনফুল 

যে ফুল ফোটে বনে, 
তাকে কি কখনো কেউ ক্ষণিকের তরে 
সাজাতে শহিদবেদি 
ভুলেও তুলে আনে আপন মনে?
~রবি রায়


অসংলগ্ন কাব্য

রবি রায়

মুগ্ধ বিষ্ময়ে আমি বারে বারে দেখেছি তোমায়,
মথিত হয়েছি বারে বারে তোমার স্বর্ণকন্ঠের সুষমায়।
তোমার মধুর সান্নিধ্য, তোমার স্নিগ্ধ পেলব পরশ
তৃষিত হৃদয়ে তোলে হিলোল,
তোমার কমনীয় নয়ন শোভায় বিবশ হয় মন।
তুমি যেন মনে হয় এক দীপশিখা অনির্বাণ-
অনুজ্জ্বল দীপ্তি বিলায়ে দূর কর যত অন্ধকার,
সীমার মাঝে অসীম হয়ে নিয়েছ যেন এই ভুবনের ভার।
শীর্ণ বক্ষে সযত্নে শোভিত তোমার হৃদয়কুঞ্জখানি
হাতছানি দেয়,
অবসন্ন মন মোর খুঁজে পায় যেন শান্তির একখানি নীড়।
এত কাছে তবু তুমি দূরে... বহুদূরে,
তুমি যেন কোন এক স্বপ্নের মরুদ্যান।
                         ***








অসহায় দৃষ্টিতে ফিরে দেখি বারবার-
যুদ্ধবিধ্বস্ত আজো পৃথিবী,
চারিদিকে কামানের অবিরত গর্জন
আর আর্ত মানুষের বুকফাটা ক্রন্দন।
দেশভেদে কাল ভেদে
এ বিলাপের নেই কোন আলাদা সরগম্।
কামানের নেই কোন বর্ণ
কামান মানে না কোন ধর্ম,
কামান মানে না কোন বাদ-ও,
বাদাবাদি দেখি যতই কিতাবে।
মানুষ ও কামান-
সম্পর্ক শুধুই খাদ্য ও খাদকের।
তাই কসোভো থেকে কারগিল-
স্বজন হারানোর হাহাকার
আর লাশের মিছিল।
পোড়া মাংসের গন্ধ খুসবু ছড়ায়
খাসোগির খাস কামরায়,
শকুনের ঝাঁক মহানন্দে সারে পরব,
যুদ্ধবাজ নাটা জার্মানটা
ফিরে আসে দেবদূত সেজে,
লুঠ করে যুবতীর প্রেম।
এখানে এখন
জননী সন্তান বিকোয় ক্ষুধার জ্বালায়,
শিশুকন্যা শিকার হয় আদিম লালসার,
ভান্ডারে মজুদ খাদ্য-
ফুটপাতে বুভুক্ষু শিশুর ক্রন্দন,
কর্মহীন হাত কর্মব্যস্ত হয় নিজেরই গলায়,
তারুণ্য বিকিয়ে যায় ধর্মের হাটে,
কাব্যে বিদ্রোহের দায়ে নির্বাসিত হয় নারী,
মানবতা মুক্তি খোঁজে কাতর আর্তনাদে।
হিংস্র হায়েনার দল
হিরোশিমা নাগাসাকির মহাভোজ শেষে
দুনিয়া দাপিয়ে বেড়ায়
নিত্যনতুন শিকারের খোঁজে
আর সুন্দরীরা উদোম নাচে
শান্তির সঙ সেজে।

শিউরে ওঠে হৃদয়,
এ কোন জাহান্নামে 
রেখে যাব একাকী তোমায়!

(অসমাপ্ত)