Monday, 31 October 2022
A Look at Africa: The San tribe of South Africa
Monday, 24 October 2022
মান্না (প্রবোধ চন্দ্র) দে: প্রয়াণ দিবসে স্মরণ
প্রবোধ চন্দ্র দে ডাক নাম মান্না দে (জন্ম: মে ১, ১৯১৯; মৃত্যু: ২৪ অক্টোবর, ২০১৩ ) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা সংগীত শিল্পী এবং সুরকারদের একজন। হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, গুজরাটিসহ প্রায় ২৪টি ভাষায় তিনি ষাট বছরেরও অধিক সময় সংগীত চর্চা করেছিলেন। আলিপুরদুয়ারে তাঁর গুণগ্রাহী দেবপ্রসাদ দাস নিজের বাড়িতে মান্না দে সংগ্রহশালা তৈরি করেছেন।বৈচিত্র্যের বিচারে তাঁকেই ভারতীয় গানের ভুবনে সবর্কালের অন্যতম সেরা গায়ক হিসেবে স্বীকার করে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞ সংগীত বোদ্ধা। কলকাতায় ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে এই কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী তথা সুরকারের জন্ম শতবর্ষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়। কলকাতাতেই প্রায় একশো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। উত্তর কলকাতায় তাঁর বাসস্থানের কাছে মর্মর মূর্তি স্থাপন করা হয়।
Saturday, 22 October 2022
জীবনানন্দ দাশ: প্রয়াণ দিবসে স্মরণ
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে 'নির্জনতম কবি' বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন। জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।
জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি দিনাতিপাত করেছেন। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকালে অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তার প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে।জীবনানন্দ দাশ - উইকিপিডিয়া (wikipedia.org)
কবির মৃত্যু রহস্য আজও অজানা অধরা
ট্রামটি অবিরাম ঘণ্টা বাজাচ্ছিল। লাভ হয়নি। ট্রাম যখন থামল, তখন তাঁর শরীরটা ঢুকে পড়েছে ক্যাচারের ভেতর। আটকে পড়া মানুষটিকে উদ্ধারের জন্য জলখাবার থেকে ছুটে আসেন দোকানটির মালিক চুনিলাল দেব। তিনিই ট্রামের ক্যাচার থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনেন কবিকে। ততক্ষণে তিনি অচেতন। পাঁজর, ঊরু, কণ্ঠার হাড় ভেঙে গেছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর। এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা মেলে প্রভাতকুমার দাস রচিত জীবনানন্দ দাশ বইয়ে। তারপর আজও, এত বছর পরও, কবি জীবনানন্দ দাশের এই দুর্ঘটনা ও মৃত্যু নানা বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। কী হয়েছিল আসলে সেদিন? তিনি কি অন্যমনস্ক ছিলেন? নিজেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চেয়েছিলেন, নাকি এটি স্রেফ দুর্ঘটনা?শনিবারের চিঠির সজনীকান্ত দাস নাকি বলেছিলেন, জীবনানন্দই একমাত্র লোক, যিনি ট্রামের মতো ধীরগতির গাড়ির তলায় পড়ে আহত হতে পারেন, অন্য কেউ হলে নিশ্চয়ই ফসকে যেতে পারতেন! ঘটনাটি আশ্চর্যই বটে। এমন বাহনের নিচে মানুষ চাপা পড়ে কী করে, যদি সে নিজে থেকে না চায়? সে কারণে জীবনানন্দের মৃত্যু বিষয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় মতবাদটি হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছেন! যে কবি ‘আট বছর আগে একদিন’ কবিতায় পঞ্চমীর চাঁদ ডুবে যাওয়ার সময় মরিবার সাধ হওয়ার কথা লিখেছেন; দিনলিপির পাতায় লিখেছেন, কোন কোন পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করা যায় এবং কেন (আই ডিটারমাইন টু কমিট সুইসাইড বাই ড্রাউনিং মাইসেলফ অ্যান্ড দ্য আদার থ্রি ইন দ্য ওশেন)। তাঁর সম্পর্কে এমন ধারণাকে পুরোপুরি ফ্যান্টাসি বলে উড়িয়ে দেওয়াও মুশকিল। আবার এটি যে কেবল একটা দুর্ঘটনাই, আর এর কারণ জীবনানন্দের অন্যমনস্কতা, সে দাবির পক্ষেও মানুষ কম নেই। তাঁর চকিত চাহনি, সতর্ক-ঘাবড়ানো, অতর্কিত পদক্ষেপ, কবিতার পঙ্ক্তিতে ‘সতত সতর্ক থেকে তবু কেউ যেন ভয়াবহভাবে পড়ে গেছে জলে’—সব মিলিয়ে ঘটনাটি নাকি অবশ্যম্ভাবী ছিল বলে আপিলা-চাপিলা গ্রন্থে লিখেছেন অশোক মিত্র। জীবনানন্দ–গবেষক ও অনুবাদক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আত্মহত্যার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন, ‘এ কথা ঠিক জীবনানন্দ অনেকবার আত্মহত্যার কথা ভেবেছেন। কীভাবে আত্মহত্যা করা সব দিক দিয়ে সুবিধাজনক, এসব কথাও দিনলিপিতে সবিস্তার লিখেছেন। কিন্তু কখনো আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেননি। ১৯৫০-এর শুরু থেকেই দীর্ঘদিনের অনাহার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা অসুখে তিনি বিপর্যস্ত ছিলেন। চোখের দৃষ্টিশক্তিও হ্রাস পেয়েছিল। সুচিকিৎসার সংগতি ও ব্যবস্থা ছিল না। নানা কারণে তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকতেন। অন্যমনস্কভাবে তিনি ট্রামলাইনের কাছে চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে নয়। দুই হাতে চারটি ডাব ঝুলিয়ে নিয়ে কেউ আত্মহত্যা করতে যায় না।’কিন্তু এই ভয়াবহ অন্যমনস্কতা, এই বিভোরতার অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে কি না, একেবারেই শারীরবৃত্তীয় কোনো কারণ—সে কথাও নির্মোহভাবে ভাবার সময় এসেছে। লোকটি জীবনানন্দ বলেই—যিনি কিনা সমাজ–সংসার দ্বারা যন্ত্রণাবিদ্ধ, জীবনধারণপ্রক্রিয়ায় ব্যতিব্যস্ত, অচরিতার্থ দাম্পত্যের গ্লানিতে বিপর্যস্ত, মৃত্যুচিন্তা যাঁর কবিতায় সতত উৎসারিত—আত্মহত্যা, অন্যমনস্কতা, মগ্নস্বভাবের মতো বিষয়গুলো প্রথমে আমাদের মাথায় আসে। কিন্তু জীবনানন্দ কি পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন সেই দিন—১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর? ওই দিন বা এর পূর্বাপর ঘটনার বিশ্লেষণ করলে কী মনে হয়?১৯৫০ সালের শুরু থেকেই কবি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্ষীণদৃষ্টিসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। ডায়াবেটিস কমানোর জন্য রোজ বিকেলে হাঁটতে বেরোতেন প্রতিবেশী সুবোধবাবুর সঙ্গে। সেই অভিশপ্ত বিকেলে তাঁর হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে আকস্মিক শর্করা কমে যাওয়ার ঘটনা কি ঘটতে পারে না? এ প্রসঙ্গে আমরা পঞ্চাশের দশকে ডায়াবেটিস চিকিৎসার ধরনটি নিয়ে একটু প্রাসঙ্গিক আলাপ করতে পারি।আজ থেকে তিন হাজার বছর আগে ভারতীয় আচার্য চরক ও শুশ্রুত ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগটি সম্পর্কে ধারণা দিলেও আশ্চর্য ব্যাপার এই যে পঞ্চাশের দশক অবধি এ রোগের কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি পৃথিবীতে। ১৯২১ সালে ইনসুলিন ইনজেকশন আবিষ্কার করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন কানাডীয় চিকিৎসক ফ্রেডেরিক বেন্টিং, এ জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারও পেয়েছিলেন, কিন্তু মুখে খাওয়ার কোনো কার্যকর ওষুধ ছিল না এই সেদিনও। জীবনানন্দ দাশ ইনসুলিন নিতেন না, অন্তত দুর্ঘটনার পর শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগপর্যন্ত না—এ তথ্য মোটামুটি নিশ্চিত জানা যায় ভূমেন্দ্র গুহর আলেখ্য জীবনানন্দ থেকে। বইয়ে তিনি বিস্তারিত লিখেছেন, ঠিক কবে থেকে হাসপাতালে কবির ইনসুলিন ইনজেকশন শুরু হলো। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় দেখতে আসবেন শুনে একদিন চিকিৎসকেরা হঠাৎই বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন, দেখতে এসেছিলেন পিজি থেকে সার্জারির সর্বাধ্যক্ষ অধ্যাপক, এনআরএস মেডিকেল কলেজের মেডিসিনের প্রধানও। তাঁরা সেদিন জানান, ‘বহুমূত্র রোগে তো তিনি আগে থেকেই ভুগছেন। এই কদিনের অব্যবস্থাপনায় (রোগটি) আরও বেড়েছে, এখন আর বড়িটড়িতে হবে না, ইনসুলিন ইনজেকশনের দরকার হবে।’ মানে কবি এর আগপর্যন্ত ‘বড়িটড়ি’ খেতেন। কী হতে পারে সেই বড়ি, ভূমেন্দ্র গুহর সূত্রে খানিক বাদেই আমরা তা জানতে পারব। তবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা হিসেবে একটি পদ্ধতি তখন অনুসরণ করা হতো—রোগীকে যথাসম্ভব অনাহারে রাখা, বিশেষত শর্করা বন্ধ করে দেওয়া। এতে রোগী দুর্বল হয়ে পড়তেন, স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ত। শেষের দিকে জীবনানন্দরও ভীষণ ভগ্নস্বাস্থ্য হয়ে গিয়েছিল, চুল পড়ে টাক হয়ে যাচ্ছিল বলে জানা যায়।শর্করা আমাদের শরীরের কোষগুলোর জন্য জ্বালানি সরবরাহ করে। শর্করা না পেলে শরীর তার চর্বি কোষগুলোকে ভেঙে জ্বালানি তৈরি করতে শুরু করে। এতে রক্তে বিপুল পরিমাণে কিটো অ্যাসিড তৈরি হয়, রক্তের পিএইচ (অম্লতা–ক্ষারতার সূচক) যায় কমে, রক্ত অম্লীয় হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের কার্যকারিতায়। পিএইচ এদিক-ওদিক হলে বিভ্রান্তি হয়, চিন্তা ও পদক্ষেপ এলোমেলো হয়ে যায়। এ ছাড়া জীবনানন্দ যে ডায়াবেটিসের জন্য ওষুধ খেতেন, এ তথ্য ভূমেন্দ্র গুহর কাছ থেকেই আমরা জানতে পারি। ভূমেন্দ্র মেডিকেলের ছাত্র, ময়ূখ নামে সাহিত্যপত্রিকা করতেন, ছিলেন জীবনানন্দ দাশের একনিষ্ঠ ভক্ত। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে জীবনানন্দের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যাওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর যে কথোপকথন হয়েছিল, তা এ রকম, ‘আমি মিনমিন করে বললুম, ওঁর কিন্তু ডায়াবেটিস আছে, ওষুধও খান, মিষ্টিও খান, তার কিছু করবেন তো? এখন কি ওষুধ খেতে পারবেন?তিনি বললেন, সেসব সেই কাল সকালে হবে, আগে রক্ত পরীক্ষা হোক, কাল হবে, তারপরে।বললে ডাক্তারবাবুর রেগে যাবারই কথা, তবু বললুম, দেরি হয়ে যাবে না তো?উনি নিজের অসহায়তা প্রকাশ করে বললেন, তা কী আর করা যাবে। রাতে রক্ত পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা তো নেই এখানে, পিজিতেও নেই।’এই কথোপকথন থেকে স্পষ্ট যে জীবনানন্দ ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতেন। ডায়াবেটিসের সর্বাধিক ব্যবহৃত ওষুধ মেটফরমিন তখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে পঞ্চাশের দশকে সালফোনিল ইউরিয়া গোত্রের ওষুধ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে গেছে।১৯৪৬ সালে বিজ্ঞানী অগাস্টি লুবেটিয়ার প্রমাণ করে দিয়েছেন, সালফোনিল ইউরিয়া প্যানক্রিয়াসের বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫০ সালে জার্মানি প্রথম বাজারজাত করে এই গোত্রের প্রথম প্রজন্মের ওষুধ টলবুটামাইড। ডায়াবেটিস চিকিৎসার এই ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে মনে হয়, জীবনানন্দ দাশ টলবুটামাইড সেবন করতেন। কারণ, এ ছাড়া আর কোনো মুখে খাওয়ার ওষুধ তখন ছিল না। আর এই ওষুধের অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো তীব্র হাইপোগ্লাইসেমিয়া। সে কারণে ১৯৭০ সালের পর থেকে এর ব্যবহার কমে যেতে থাকে, ক্রমে এর উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। জীবনানন্দ যদি টলবুটামাইড গ্রহণ করে থাকেন, তবে তিনি শর্করা কমে যাওয়ার তীব্র ঝুঁকিতে ছিলেন। বিশেষত, যদি খাবার কম গ্রহণ করেন, আর যথেষ্ট খাবার না খেয়েই প্রচুর হাঁটাহাঁটি করেন। দেখা যাচ্ছে, তিনি ঠিক তা-ই করতেন।জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের উপন্যাস একজন কমলালেবু থেকে উদ্ধৃত করি, ‘এ সময় জীবনানন্দের ডায়াবেটিস ধরা পড়ল। ডাক্তার বললেন, নিয়মিত হাঁটতে হবে। হাঁটতে কোনো আপত্তি নেই জীবনানন্দের। প্রতি বিকেলে সুবোধবাবুর সঙ্গে তাঁর ল্যান্সডাউন রোডের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ ধরে কিছুটা পশ্চিমে তারপর রসা রোড ছুঁয়ে সাদার্ন অ্যাভিনিউ দিয়ে সোজা চলে যেতেন গড়িয়াহাটা গোলপার্কে। সেখানে একটা লম্বা চক্কর দিয়ে ফিরে আসতেন বাড়িতে।’এ তো অনেকখানি হাঁটা। ফেরার সময়ে তাঁর রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক, যদি তিনি অনাহার চর্চা করেন আর টলবুটামাইডের মতো বিপজ্জনক ওষুধ সেবন করে থাকেন। শর্করা কমে গেলে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, ঝাপসা হয়ে আসে চিন্তাশক্তি ও মনোযোগ, যা এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটার পক্ষে যথেষ্ট। এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিই, দুর্ঘটনার আগের দুই দিন বৈকালিক ভ্রমণের পর ঠিক এ সময়ে কবি এমন অদ্ভুত আর বিভ্রান্তিকর আচরণ করেছেন। জীবনানন্দ ১১ ও ১২ অক্টোবর পরপর দুদিন বিকেলে ত্রিকোণ পার্কে ছোট ভাই অশোকানন্দ দাশের বাড়িতে উদ্ভ্রান্তের মতো গিয়ে হাজির হয়েছিলেন এই খবর নিতে যে কেউ দেশপ্রিয় পার্কের কাছাকাছি ট্রামের নিচে পড়ে আহত হয়েছেন কি না। গৃহকর্মীর কাছে এ কথা শুনে কবির ছোট বোন সুচরিতা দাশ প্রায় ছুটতে ছুটতে জীবনানন্দের ল্যান্সডাউনের বাড়িতে এসে হাজির। ভূমেন্দ্রর জবানিতে, ‘জীবনানন্দ বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন, কী হলো, তুই হাঁপাচ্ছিস রে, কী হলো যে ছুটতে ছুটতে এলি?দিদি (সুচরিতা দাশ) দ্রুত শ্বাস নেয়ার ভঙ্গিতে বলেছিলেন, তুমি কী সব বলে এসেছ, লতিকা (অশোকানন্দের বাড়ির গৃহকর্মী) তো কিছুই বুঝতে পারেনি, কী হয়েছে বল তো, তোমার শরীর খারাপ?জীবনানন্দ সহজভাবে বললেন, ছুটে এসেছিস তো, সেই জন্য। চুপচাপ বোস, ঠিক হয়ে যাবে। আমার শরীর খারাপ হতে যাবে কেন, আমি তো ভালোই আছি।’তার মানে ততক্ষণে তিনি বিভ্রান্তির জাল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। নিশ্চয় বৈকালিক ভ্রমণ শেষে বাড়িতে ফিরে চা-নাশতাও খেয়েছেন। বিশ্রাম নিয়েছেন। তাই অসংলগ্ন আচরণ আর করছেন না। কিন্তু ১২ অক্টোবর আবার একই ঘটনা ঘটায় সুচরিতা দাশ একটু রেগেই বলেছিলেন, ‘তোমার নিশ্চয় কোনো অসুখবিসুখ হয়েছে, নইলে একই খবর রোজ বানিয়ে নেবে কেন?’ এতে জীবনানন্দ ঝিম মেরে গেলেন অনেকক্ষণের জন্য। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, ‘কী করি বল তো, এ যেন সেই ঠিক দুক্কুরবেলা ভূতে মারে ঢেলা!’এর ঠিক এক দিন পর, ১৪ অক্টোবর, যেন ভূতের ঢেলার আঘাতে তিনি পড়ে গেলেন ট্রামের নিচে। এ কি কেবল অন্যমনস্কতা? এ কি কেবলই তাঁর কবিসুলভ মগ্ন স্বভাবের কারণে, নাকি সত্যি এই সময় তাঁর শরীর খারাপ করত? ক্রমাগত হাঁটতে হাঁটতে কমে যেত রক্তের শর্করা, মাথার ভেতর এলোমেলো হয়ে যেত, হেঁয়ালিতে ভরে যেত চিন্তাচেতনা? এমনটা হত কি না, সেটি প্রমাণের আর সুযোগ নেই। তখনো ছিল না, যেহেতু আমরা ভূমেন্দ্র গুহর কথোপকথন থেকে জানতে পেরেছি যে সামান্য রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা, যা এখন সবাই বাড়িতেই বসে করতে পারেন এক মিনিটে, তার কোনো ব্যবস্থা ছিল না সে রাতে—শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তো নয়ই, এমনকি পিজিতেও নয়। তাহলে জীবনানন্দর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছিল কি না, সেটি আমাদের আজ আর প্রমাণ করার জো নেই। এ কারণে এত দিন পরও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের মতো আমাদেরও বলতে হচ্ছে, ‘এক হেমন্ত রাতে নিয়তিতাড়িত যে ট্রাম রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের ঘাস চিরে এগিয়ে আসে, দেশপ্রিয় পার্ক পার হতেই সে রূপান্তরিত হয়ে যায় ইতিহাসযানে। জীবনানন্দ শেলী ক্যাফের সামনে কিয়স্কের পাশে থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে পড়ে থেকে আমাদের বিস্মিত করে রেখে গেলেন চিরদিনের মতো।’ তথ্য: প্রথমআলো ও গুগলমিডিয়া। ধন্যবাদ।
***
জীবনানন্দ দাশ
Monday, 17 October 2022
সুপ্রিতী সিং II এক জীবনসংগ্রামে লড়াই করা বোন ❤️ হুগলী জেলার রাজহাটের বাসিন্দা
Friday, 14 October 2022
Historical Chronicles: SLAVERY: The arrival of Africans in the New World ...
Wednesday, 12 October 2022
BOOK HUB: Uncle Tom’s Cabin ।। One book helped build the Ame...
ANIN-Alternative News & Information Network: Corruption in India
Wednesday, 5 October 2022
Monday, 3 October 2022
RABI ROY: My camera goes on
-
Wedding Of A Human Being with Krishna Idol in Krishnanagar ( This report was originally written in 1998. The current article is a rewritte...
-
The Sweeper Nabasri Chakrabarty Biswas It was a sunny day, I sat on a bench under the shed of a railway station, The wind was ...
-
Authored by: RABI ROY Updated: Jun 30, 2021 The infamous Indian custom of Satidaha Widow-burning in the name of sati is an expression o...