LinkedIn

Sunday, 7 August 2022

আজ ২২শে শ্রাবণ: হোকনা একটু রবি রবিস্মরণ

বিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাঁর জীবনে যত দুঃখ কষ্ট বহন করেছেন, তা পৃথিবীর আর কোনো সাহিত্যিকের জীবনে, ঘটেছে বলে জানা নেই।

1. মাত্র তের বছর বয়সে মাতৃহারা হন।
2. তাঁর বিয়ের রাতে ভগ্নিপতি মারা যান।
3. চারমাস পরে আত্মহত্যা করেন যার প্রেরণা ও ভালোবাসায়, তিনি কবি হয়ে উঠেছেন, সেই নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবী।
4. ১৯০২ কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী মারা গেলেন মাত্র ২৯ বছর বয়সে। রবীন্দ্রনাথ তখন একচল্লিশ।
5. দুই মেয়ের বিয়ের সময় শর্ত ছিল, জামাইদের বিলেতে ব্যারিস্টারি ও ডাক্তারি পড়াতে খরচ দিতে হবে কবিগুরুকে। রবিঠাকুর বিলেত পাঠালেন তাঁদের। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই রেনুকা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাঁচানো গেলনা তাঁকে।
6. ১৯০৫ সালে চলে গেলেন, পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
7. ১৯০৭ কনিষ্ঠ পুত্রের কলেরায় মৃত্যু মাত্র ১২ বছর বয়সে।
8. ১৯১৩ সাল, রবীন্দ্রনাথ নোবেল পেলেন।
9. ১৯১৮ বড়মেয়ে বেলি অসুস্থ। বেলাকে প্রতিদিন গাড়িতে করে দেখতে যেতেন কবি। বাবার হাত ধরে, মেয়ে বসে থাকত বিছানায়। আর তখন রবীন্দ্রনাথের জামাই শরৎ, টেবিলের ওপর পা তুলে সিগারেট খেতে খেতে, রবীন্দ্রনাথকে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করতেন। একদিন বেলাকে দেখতে গিয়ে, মাঝপথে শুনলেন সে মারা গেছে।
মেয়েকে শেষ দেখা না দেখে ফিরে এলেন বাড়ি। পুত্র রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন, বাড়িতে এসে তিনি কাউকে বুঝতে দিলেন না কী শোকে, কী অপমানে, কী অসহ্য বেদনার মধ্য দিয়ে তিনি সন্তানকে হারিয়েছেন।
10. কবির ছোট মেয়ে মীরার বিয়ে দিয়েছিলেন নগেন্দ্রনাথের সঙ্গে, যাকে বিলাতে কৃষিবিজ্ঞানী করার জন্য প্রতিমাসে সেইসময় পাঁচশ টাকা করে পাঠাতেন। আর নগেন্দ্র চিঠি লিখে আরও টাকা পাঠানোর তাগাদা দিতেন। প্রত্যুত্তরে কবি লিখতেন, আমার জমিদারী থেকে প্রতিমাসে পাঁচশ টাকাই পাই। তার পুরোটাই তোমাকে পাঠাই।
সেই নগেন্দ্র বিলাত থেকে ফিরে, দুই সন্তান সহ মীরাকে পরিত্যাগ করে অন্যত্র চলে যান।
কবির তিন জামাই যাদের প্রত্যেককে বিদেশে পড়িয়ে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তারা প্রতেকেই কোন না কোন ভাবে কবিকে দুঃখ দিয়েছেন।
সারাজীবনে কবি দুঃখ পেয়েছেন বারেবারে, অপমানিত-উপেক্ষিতও হয়েছেন অসংখ্যবার।
11. আর্জেন্টিনার কবিপ্রেমী লেখিকা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পর সাথে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে কুৎসা করে সংবাদপত্রও প্রকাশিত হয়েছে।
12. কবি তখন ৬৪, নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশ্ববরেণ্য সাহিত্যিকl কবির নোবেল প্রাপ্তি নিয়েও কিছু লোক তাঁকে ব্যাঙ্গও করেছিলেন।
চিঠি লিখে কবির কাছে জানতে চাইছেন নোবেল পুরস্কার পাওয়ার টেকনিকটা কী? সেক্ষেত্রে ভাবী পুরস্কারপ্রাপক, কবিকে অর্ধেক টাকা দিতেও রাজি।
13. শান্তিনিকেতনে সাক্ষাৎ করতে এসে কেউ কবিকে বলছেন, রবিবাবু আপনি কি এখনো কবিতা-টবিতা লেখেন নাকি? মানে অতোগুলো টাকা পাওয়ার পর আবার কেউ লেখে নাকি!
অথচ অনেকেই জানেন না, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির খবরটা, প্রশান্তচন্দ্র মহলনাবিশ যখন কবিকে দেন, তখন কবির প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল,
‘যাক, ওই টাকায় এবার বিশ্বভারতীর সেচখাল কাটার সংস্থানটা হবে’।
যারা কবি বা লেখক তারা সকলেই সমাজের কাছে একটা স্বীকৃতি চায়, রবীন্দ্রনাথ বহুদিন সেটা, তখনকার বাঙালি সমাজের কাছে পাননি।
তাই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর, তাঁকে যখন সম্বর্ধনা দেওয়া হলো তখন তিনি বললেন...
‘আমি এই সম্মানের পাত্রকে, ওষ্ঠ পর্যন্ত তুলব। কিন্তু গলা পর্যন্ত যেতে দেবনা’।
কতবড় অভিমান ও দুঃখ থাকলে এ কথা বলা যায়!
14. রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন, 'পৃথিবীতে এসে যে ব্যক্তি দুঃখ পেলনা, সে লোক ঈশ্বরের কাছ থেকে সব পাওয়া পেলনা’।
বারেবারে মৃত্যু-দুঃখ-অপমান রবীন্দ্রনাথকে শাণিত করেছে সৃষ্টিপথে, নির্মোহ করেছে জগৎসংসারে, নস্টালজিক করেছে ক্ষণেক্ষণে। তাই তিনি বলতে পেরেছেন, ‘ আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবুও আনন্দ, তবুও অনন্ত জাগে’। আমরাও যেন সদা তাঁর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে পারি, “ মনেরে আজ কহ যে/ ভালো মন্দ যাহাই আসুক/ সত্যরে লও সহজে”....

Courtesy: Chaitali Chatterjee

সংযোজন: নোবল পদকটাও চুরি গেছে।



Rabindranath Tagore

1 comment: